পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
লখনউকে বরাবর ‘সেফ সিট’ বলেই মনে করে বিজেপি। সেই ১৯৯১ সাল থেকে টানা এই আসনটি দখলে রেখেছে গেরুয়া শিবির। ১৯৯১ থেকে ২০০৯ অবধি টানা পাঁচবার এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ি। লখনউয়ের মানুষের অগাধ আস্থা ছিল তাঁর উপর। ছিলেন বিশ্বাস, ভরসা এবং গর্বের জায়গা। ২০০৯ সালে এই কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন লালজি ট্যান্ডন। আর গত লোকসভা ভোটে মোদি হাওয়ায় ভর করে ২ লক্ষ ৭২ হাজার ভোটে জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং। ভেঙে দিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে বাজপেয়ির ২ লক্ষ ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ের মার্জিনের রেকর্ড। ২০১৪ সালে রাজনাথের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কংগ্রেসের রীতা বহুগুণা যোশি। কিন্তু এবার তিনি দলবদল করে বিজেপিতে। রাতারাতি উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীও। ফলে এই লোকসভা কেন্দ্রে আপাতদৃষ্টিতে রাজনাথের জয়ের পথ অনেকটা পরিষ্কার। সত্যিই কি তাই?
বিজেপি মুখপাত্র হিমাংশু দুবে বলছেন, ‘হবে নাই বা কেন? প্রায় ২০ লক্ষ ভোটারের এই কেন্দ্রে সপা বা বিএসপি একবারও জেতেনি। এবারও পারবে না। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র-লখনউ উত্তর, লখনউ পূর্ব, লখনউ পশ্চিম, লখনউ মধ্য ও লখনউ ক্যান্টনমেন্ট বিজেপির দখলে। বিরোধীরা দাঁত ফোটাতে পারে না।’ কিন্তু এবারের ভোটে ‘বুয়া-ভাতিজা’ মায়াবতী-অখিলেশের ‘মহাগঠবন্ধন’? উল্টো মেরুর এই মহাজোট উত্তরপ্রদেশ এর আগে কোনওদিন দেখেনি। সেখানেই রয়ে গিয়েছে প্রশ্ন। যে অঙ্ক মেলাতে হিমশিম দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খাসতালুকও। এই আসনে বিএসপির সমর্থনে লড়ছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহার পত্নী পুনম সিনহা। স্বামীর বিজেপি ত্যাগ থেকে নিজের সমাজবাদী পার্টিতে যোগদান ইস্যুতে নানা প্রশ্নে পুনমকে এক মুহূর্তের জন্যও রাজনীতির ময়দানে নবাগতা মনে হয়নি। প্রশ্ন উঠতেই পারে পুনমের মতো একজন প্রার্থীকে কেন বাছলেন অখিলেশ? কেনই বা তা মেনে নিলেন মায়াবতী? কী সেই অঙ্ক?
সমাজবাদী পার্টির নেতা আশিস যাদবের কথায়, ‘রাজনাথ সিংয়ের মতো দুঁদে রাজনীতিকের বিরুদ্ধে একেবারে অঙ্ক কষে ভোটের ময়দানে নামানো হয়েছে পুনমকে। লখনউ কেন্দ্রে কায়স্থ ভোটার আছেন বেশ কয়েক লক্ষ। মুসলিম ভোটার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ এবং সিন্ধি ভোটদাতার সংখ্যা এক লক্ষ তিরিশ হাজারের মতো। এ ছাড়াও দলিত ভোটার আছেন প্রায় দু’লক্ষের মতো। পুনম নিজে সিন্ধি। তাঁর স্বামী শত্রুঘ্ন কায়স্থ। এর সঙ্গে মায়াবতীর অনুগামী দলিত, অখিলেশের অনুগামী যাদব ভোটাররা একজোট হলে রাজনাথের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জায়গায় থাকবেন পুনম।’ কংগ্রেসেরও এই কেন্দ্রে ভালোই ভোট রয়েছে। বিশেষত এখানকার ব্রাহ্মণ ভোটের উপর।
আসলে লখনউ মানেই আভিজাত্যে মোড়া ইতিহাস। স্থাপত্যের খিলানে লেখা নবাবি কীর্তিগাঁথা। আর বাঙালির কাছে লখনউ মানেই বাদশাহী আংটির রহস্যভেদ। তবে বইয়ে পড়া বা শোনা এ লখনউয়ের পাশেই আছে আরও এক নগরী। তা ঝাঁ-চকচকে, স্মার্ট, আধুনিকতার পর্দা মোড়া। আধুনিকতার ছোঁয়া গোমতীনগরে। পশ এরিয়া বলে পরিচিত। একই অঙ্গে এত রূপই লখনউ নগরীর বিশেষত্ব। আর তাই বহিরঙ্গে ঝকঝকে লখনউ মহানগরীর ভিতর সেই আভিজাত্যের জড়োয়ায় মোড়া পুরনো নগরীকে চিনতে গেলে ওল্ড লখনউ দেখতে হবে। কিন্তু সেখানে হাঁটতে হাঁটতে একবারও মনে হয়নি লখনউ শহরে কোনও ভোটের উত্তাপ আছে। বিমানবন্দর থেকে মহানগরীরর রাজপথে কোনও ব্যানার, পোস্টার, ফ্লেক্স নজরে পড়েনি। মনে হচ্ছে না আগামী ৬ মে এখানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ভোটের ময়দানে আনকোড়া প্রতিপক্ষ পেয়ে কতটা স্বস্তিতে রাজনাথ সিং? না, প্রতিপক্ষ নন। রাজনাথের লড়াই নিজের সঙ্গেই। কারণ, শহরজুড়ে মোদির মুখোশে হারিয়ে গিয়েছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলাদা সত্ত্বা। সর্বত্র একটাই মুখ। মোদি, মোদি আর মোদি। গোমতী নদীর তীরে যেন মোদির সঙ্গে হঠাৎ দেখা! ভোটের মরসুমে উত্তরপ্রদেশে নতুন ট্রেন্ড মোদি মুখোশ, পাগড়ি, গেঞ্জি। দেখলেই বোঝা যায়, মোদির মুখোশ পড়েই যেন গড় বাঁচাতে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটছেন ‘ঠাকুর’ রাজনাথ সিংও। অবশ্য তাঁর পিছু পিছু ছুটছে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও। নগরীর অলিগলি ম’ ম’কাবাবের গন্ধে কিংবা রাম আশ্রের মিষ্টির স্বাদেও যেন ভোট রাজনীতির তেতো স্বাদ!