সমৃদ্ধ দত্ত, নাসিক, ২৪ এপ্রিল: দু’টি লড়াই। একটি হল সরাসরি। অর্থাৎ ভোটে জেতার। অন্যটি পরোক্ষে। মহারাষ্ট্রের বিগ ব্রাদার কে তা প্রমাণ করা। নাসিকে প্রকাশ্যে চলছে প্রথম লড়াই। নসিকে গোপনে চলছে দ্বিতীয় লড়াই। জাতীয় রাজনীতির দুই প্রতিপক্ষ কংগ্রেস এবং বিজেপি নাসিকে সামনে থেকে থেকেই। তাই তাঁদের কোন প্রেস্টিজ ফাইটও নেই এখানে। নাসিক লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই উদ্ধব থ্যাকারের সঙ্গে শারদ পাওয়ারের মধ্যে। শিবসেনার হেমন্ত গডসে বনাম রাষ্ট্রবাদী কংগ্রেস পার্টি (শারদ পাওয়ারের পার্টি) সমীর ভুজবলের। প্রায় ৫৩ বছরের একটি ইতিহাসের ধারা অনুযায়ী, এবার জেতা উচিত ইউপিএ প্রার্থী সমীর ভুজবলের। আর অন্যদিকে ইমেজ রক্ষার তাগিদে সেই ইতিহাস পালটে দিতে মরিয়া বিজেপি। শিবসেনার প্রার্থী। তা সত্ত্বেও বিজেপি এত প্রাণপণে পরিশ্রম করছে কেন? কারণ পেঁয়াজ আর আঙুরের রাজধানী নাসিক আজ কৃষক বিক্ষোভের কারণে গোটা দেশের নজরে চলে এসেছে। সুতরাং বিজেপিকে প্রমাণ করতে হবে, যতই কৃষকদের ক্ষোভকে উস্কে দিয়ে বিরোধীরা প্রচার চালাক, আদতে মোদিজির ভাবমূর্তি অনেক বড়। তাই নাসিক থেকে মুম্বই কৃষকদের সেই মহা পদযাত্রার পরও মোদিই জিতলেন। এই বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি। আর একইসঙ্গে শিবসেনাও নিজেদের ইমেজ বাড়াতে সবথেকে বেশি জোর দিয়েছে নাসিকে। কারণ, নাসিক এমন একটি কেন্দ্র, যেখান থেকে দু’বার কেউ জেতে না। এই বছর যে দলের প্রার্থী জয়ী হবে, আগামী পাঁচ বছর পর সেই দল অবশ্যই পরাজিত হবে। এটাই হয়ে এসেছে এতকাল নাসিকে। শেষবার এরকম ইতিহাসের ব্যতিক্রম হয়েছিল ষাটের দশকের শেষদিকে। তারপর থেকে লাগাতার নাসিক প্রতি পাঁচ বছরে এমপি বদলে দিয়েছে। সুতরাং শিবসেনা প্রার্থী হেমন্ত গডসে এবার যে হারবেনই, সেই আশঙ্কা পুরোদমে রয়েছে। আর সেই মিথকে বদলে দিয়ে যাতে হেমন্ত গডসে আবার জয়ী হন, সেজন্য জানপ্রাণ দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে শিবসেনা। যদি হেমন্ত গডসে আবার জিতে যান, তাহলে বিরাট একটা সম্মান প্রাপ্তি। শিবসেনা বলতে পারবে, তারাই পেরেছে নাসিকের ইতিহাস বদলাতে।
আবার অন্যদিকে বিজেপিকেও কঠোর বার্তা দেওয়া যাবে যে, যতই মহারাষ্ট্রে বিজেপি নিজেদের বিগ ব্রাদার তকমা দেওয়ার চেষ্টা করুক, এখনও পর্যন্ত এরাজ্যে এনডিএর বড় ভাই শিবসেনাই। সুতরাং শিবসেনার শুধুমাত্র ইউপিএ প্রার্থী সমীর ভুজবলকে হারানোই একমাত্র লক্ষ্য নয়। মহারাষ্ট্রের চালিকাশক্তি যে এখনও তাদেরই হাতে, সেটাও প্রমাণও করতে হবে। যদি নাসিক আসনে এবার শিবসেনা হেরে যায়, তাহলে কিন্তু শিবসেনার আগামীদিনের রাজনীতিতেও বড়সড় প্রভাব পড়বে। কারণ সেক্ষেত্রে বিজেপি অনেক সুবিধা পেয়ে যাবে প্রভাবের দিক থেকে। বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রমাণ করে দিয়েছে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার প্রভাব এক ধাক্কায় তারা কমিয়ে দিয়েছে। এবার লোকসভা ভোটেও যদি নাসিকে শিবসেনা পরাজিত হয়, তাহলে আগামীদিনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আর দর কষার জায়গাতেই থাকতে পারবেন না উদ্ধব থ্যাকারে।
ঠিক একই পরিস্থিতি ইউপিএর। নাসিক আসন শারদ পাওয়ারের দলকে দেওয়া নিয়ে বহু টালবাহানা করেছে কংগ্রেস। এই আসনে আবার যদি শারদ পাওয়ারের দল পরাজিত হয় তাহলে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে পাওয়ারের প্রভাব কমবে। তাই নাসিককে স্থির করতে হচ্ছে, আঞ্চলিক নাকি জাতীয় দল, আগামীদিনে কাকে সে বেশি গুরুত্ব দেবে।