পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
নাসিক থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে দিন্দোরি ব্লক। সেখান থেকে আরও সাড়ে ৬ কিলোমিটার দূরে গ্রামের পর গ্রামে আপাতত ঘরে ঘরে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের আতঙ্ক, বাবা কোথায়? এই সেই দিন্দোরি, যেখান থেকে জন্ম হয়েছিল কৃষকদের নাসিক টু মুম্বই পদযাত্রা। ‘সবই আমি বুঝি বুঝলেন তো!’ ধ্বংস হয়ে যাওয়া ক্যাপসিকামের দর না পাওয়া দুই একর শুনশান খেতের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন সঞ্জয় বরোস্থি। ‘আমি বুঝি যে, মা আর ছেলে সব সময় ভয়ে থাকে আজকাল... আমি বোধহয় আত্মহত্যা করব। তাই চোখে চোখে রাখে। যোগেশ কাজকর্ম ফেলে আমাকে পাহারা দেয়! ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে ক্যাপসিকামের চাষ করার পর জালিপ্রতি মাত্র ৬ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। হওয়ার কথা ৬০ টাকা। আমি কিন্তু ক্যাপসিকাম করতে চাইনি জানেন! আমাকে ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারই জোর করল পলি হাউস চাষ করতে। আমি তো মাত্র ১ লক্ষ টাকা লোন চাইছিলাম! আমাকে এই ক্যাপসিকাম করতে বাধ্য করিয়ে ১০ লক্ষ ঋণ দিল। যখন দর পেলাম না, তখন লোন ডিফল্টার ঘোষণা করল। সাড়ে চার লক্ষ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পর এখন আমি ফকির। কোথায় পাব টাকা? এ বছর টম্যাটো করলাম। কত টাকা পেলাম জানেন? এক টাকা প্রতি কেজি! ভাবতে পারেন? আর আজ যখন-তখন ব্যাঙ্কের লোক এসে ভয় দেখাচ্ছে, রাতবিরেতে ফোন করে বলছে, জমি বাড়ি সব কেড়ে নেবে... আমাকে জেলে পাঠাবে। আমাদের খাবার জুটছে না স্যার... ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, পেঁয়াজ, আঙুর... সব চেষ্টা করি। কোনও ফসলের দর পাই না আমরা। সরকার কুইন্টালে ৪৫০০ সাপোর্ট প্রাইস ঘোষণা করে। অথচ আমরা বিক্রি করতে গেলে হাসে আর বলে, যা পাচ্ছ নিয়ে নাও। ৩৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয় টুর ডাল। আমরা কী করব স্যার..?’ সঞ্জয় বারোস্থি একা নন, একঝাঁক গ্রামবাসীর চোখে জল। কয়েকজন বললেন, প্রবীণভাই বেঁচে গেলেন। কে প্রবীণ ভাই? প্রবীণ মেদানি। গত সপ্তাহে সকালে উঠে বলেছিলেন ব্যাঙ্কে যাচ্ছি। যাননি। নিজের খেতের মাঝখানে বসে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নাসিক থেকে মুম্বই ভারত কাঁপানো কৃষক লং মার্চে গিয়েছিলেন প্রবীণ মেদানি। কিন্তু আন্দোলনে লাভ হল না। তাই আত্মহত্যায় ফিরছেন মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। গত ১০ দিনে চারজন আত্মহত্যা করলেন এই দিন্দোরি লোকসভা কেন্দ্রেই! তাই সঞ্জয় বরোস্থিদের পাহারা দিচ্ছেন তাঁদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা। দাম না পাওয়া মানে কতটা খারাপ? কৃষক আট্টা শাঠে বললেন, ‘৩৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে পেয়েছিলাম ১৬৫০ টাকা! বুঝলেন কতটা খারাপ? কেন, আপনি সেই সঞ্জয় শাঠের কথা জানেন না? সাড়ে সাতশো কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে মহাজনের থেকে ১০৬৪ টাকার চেক পেয়ে খেপে গিয়ে সেই চেক সঞ্জয় শাঠে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ডাকযোগে! আর আমরা সবাই সেদিন বস্তা বস্তা পেঁয়াজ মোদিজির সভায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রেডি রেডি হয়েছিলাম জানেন তো! মোদিজিকে উপহার দিতাম! কিন্তু পুলিস কীভাবে যেন জেনে গেল। সেদিন সকাল থেকে গ্রামেই আটকে রেখেছিল। যেতে পারিনি সভায়! গেলে চিৎকার করে বলতাম, আমাদের কর্জা মাফি হচ্ছে না কেন? আমাদের দুই একরের বেশি জমি আছে তাই ৬ হাজার টাকা অনুদান পাব না? ফসলের দামই যে পাই না।’
মধ্যরাতে অটো চলছে দিন্দোরি থেকে, সরগুনা থেকে, পেঠ থেকে, কালুওয়ন্ত থেকে। আট কিলোমিটার দূরে লাকমপুর। এলাকার একমাত্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্ট। ৫১টি কারখানা। রোজ মধ্যরাত থেকে সেখানে প্রতিটি কারখানার সামনে লম্বা লাইন পড়ে যুবকদের। কাজের জন্য। এখানে কোনও পাকা চাকরি নেই। সব অস্থায়ী। প্রতিদিন যে আগে গেটে যাবে, সে আগে সেদিনের কাজ পাবে। কিন্তু এত বেশি চাহিদা যে, কেউই ১৫ দিনের বেশি কাজ পাই না। বললেন পঙ্কজ অসওয়ালে। দিনপ্রতি কাজের রেট ৩২০ টাকা। কৃষি আর রোজগার দুটোই প্রধান সঙ্কট দিন্দোরি জুড়ে। কৃষকদের রাগ নির্বাচনে যাতে প্রভাব না ফেলে, তার জন্য বিজেপি কী করছে? সবথেকে সহজ একটা কাজ। তিনবারের জয়ী এমপি হরিশ্চন্দ্র চৌহানকে এবার প্রার্থী করা হয়নি। তাঁকে বদলে দিয়েই বার্তা দেওয়া হয়েছে, নতুন প্রার্থীকে ভোট দিন। তিনি নিশ্চয়ই সমস্যা মেটাবেন। আর সেটাই হল মজা। যাঁকে এবার দাঁড় করানো হয়েছে, সেই ভারতী পাওয়ার গত নির্বাচনে ছিলেন ইউপিএ প্রার্থী। এবার তিনিই এনডিএতে। ২০১৪ সালে বিজেপি-শিবসেনা যাঁর বিরুদ্ধে প্রচার করে ভোট না দেওয়ার ডাক দিয়েছিল, পাঁচ বছর পর সেই ব্যক্তিকেই নিজেদের প্রার্থী করে এবার জেতাতে বলছে। দিন্দোরিতে অবিরত দলবদল হয়। শুধু কৃষকদের ভাগ্যবদল হয় না!