কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
এবারের ভোট কার্যত বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি—এই তিন শিবিরের কাছেই অ্যাসিড টেস্ট বলে মনে করা হচ্ছে। সুদূর দক্ষিণের এই মালয়ালি রাজ্যে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিধানসভার ভোটে নিয়ম করে পালাবদলের রীতি চালু হয়ে রয়েছে। সেই রীতির জেরেই ২০১৬ সালের ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সচিবালয়ের গদি দখল করে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামজোট। আগামী ২৩মে ভোটের ফল বেরনোর ঠিক দু’দিন পর ২৫মে বর্তমান পিনারাই বিজয়ন সরকার তৃতীয় বছরে পা দেবে। তিন বছর ধরে সরকার চালানোর গর্বকে উৎসবে পরিণত করার আগাম পরিকল্পনাও ছকে রেখেছে সিপিএম। কিন্তু ভোটের ফল আশানুরূপ না হলে সেই গুড়ে বালি পড়ার সমূহ আশঙ্কাও রয়েছে। তাই সরকারের বর্ষপূর্তি উৎসব নিয়ে এখনই আগ বাড়িয়ে কোনও ঘোষণার ঝুঁকি নিচ্ছে না তারা। আসলে এবার ভোটের যে উত্তাপ কেরল জুড়ে ছড়িয়েছে তা অতীতে রাজ্যবাসী কখনও উপলব্ধি করেনি। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ঝক্কি সামলেও কংগ্রেস পরিচালনাধীন ইউডিএফ জোট ১২টি আসন দখল করে। বামেরা পেয়েছিল বাকি আটটি। এবার কংগ্রেস কেন্দ্র বা রাজ্যের কোথাও ক্ষমতায় নেই। ফলে তারা এবার বাড়তি অ্যাডভান্টেজ নিয়েই ভোটের লড়াই শুরু করেছিল। আর তাদের সেই অ্যাডভান্টেজের মাত্রা কয়েক কদম বাড়াতে সাহায্য করেছে রাজ্য থেকে স্বয়ং রাহুল গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি।
ইউডিএফ জোটে এই অ্যাডভান্টেজের সঙ্গে সবরীমালা, গত বছরের বিধ্বংসী বন্যা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক হানাহানির মতো ইস্যুগুলিতে বামেরা অনেকটা ব্যাকফুটে। তাই গতবারের জেতা আসন সংখ্যা ধরে রাখাই এবার তাদের প্রধান এবং প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে রয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে দলের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার মতো উদ্বেগ। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর দলের যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে অগতির গতি হিসেবে গোটা মার্কসবাদী নেতৃত্ব এখন কেরলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাড়তি কদরও পাচ্ছেন এই কারণে। পিনারাই বিজয়ন-কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণাণরা যদি এই ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েন তাহলে দলের অন্দরে তাঁদের সেই কদর ধরে রাখাও নিঃসন্দেহে কঠিন হয়ে পড়বে। সব মিলিয়ে তাই কেরলের বাম শিবির এবারের ভোট নিয়ে বেজায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
কেন্দ্রে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি সরকারের ফিরে আসা ঠেকাতে দিল্লিতে কংগ্রেসকে দরকার—রাহুলের দলের এই স্লোগানে এবার কেরলের মুসলিম ও খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের তরফে যথেষ্ট সাড়া মিলেছে। অন্তত প্রচার পর্বে সেই লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে রাজ্যের নানা জায়গায়। এই দুই অংশের ভোট ব্যাঙ্কের অনেকটাই বামেদের দখলে ছিল বলে তারা এতদিন নিশ্চিত ছিল। কিন্তু এবার সংঘ পরিবারের তৈরি কড়া হিন্দুত্বের আবহে আতঙ্কিত হয়ে রাজ্যের দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইউডিএফ জোটের দিকেই বেশি ঝোঁকার ইঙ্গিত দিয়েছে নানা সমীক্ষায়। তবে এসব সত্ত্বেও কংগ্রেস যদি নানা কেন্দ্রে অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও অন্তর্ঘাতের কারণে শেষমেশ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলে সেটা কেবল দল নয়, রাহুল গান্ধীর কাছে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে।
সবরীমালাকাণ্ডকে সামনে রেখে বিজেপি এবার কেরলে দাঁত ফোটাতে মরিয়া মনোভাব নিয়ে লড়াই করছে। তিরুবনন্তপুরম, পাথনামথিট্টা, ত্রিশূরের মতো কয়েকটি আসনে তারা বিশেষভাবে জোরও দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ সহ দলের তাবড় শীর্ষস্থানীয় নেতারা বারবার গিয়েছেন প্রচারে। তাই চিরাচরিত বাম-কংগ্রেস নয়, তৃতীয়পক্ষ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ের অন্যতম কুশীলব হিসেবে রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ার তাগিদে কেরলে খাতা খুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। এখন দেখার, নিজেদের অঙ্ক মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সমীক্ষকদের সঠিক বা ভুল প্রমাণ করতে পারে ।