বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দু’রকমভাবে কাজ হয় টেক্সটাইলে। কাঁচামাল নিয়ে কেউ ঘরে বসে কাজ করে। এদের বলা হয় জব ওয়ার্ক। আর কেউ ইউনিটে মাসিক বা সাপ্তাহিক মজুরিতে কাজ করে। জব ওয়ার্কাররা জীবনে কোনওদিন রসিদ কেটেছে বলুন তো? বললেন নবীন। ওদের জিএসটি নম্বরও নেই। ফলে ওদের ট্যাক্সের বোঝা মিল মালিকরা নিয়ে নিচ্ছে। তার বদলে জব ওয়ার্কারদের কম পেমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। ওদেরও লস। তাই বহু জব ওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সুরাতে পাড়ায় পাড়ায় বাঙালি আর ওড়িয়ার সহাবস্থান। কেন? কারণ ওড়িশা এ শহরে আসে পাওয়ারলুমে কাজ করতে। আর বাঙালি আসে জরির কাজে। সুরাত রেল স্টেশনের ঠিক পিছনে এ কে রোড। ওখানেই সার দিয়ে এমব্রয়ডারি ইউনিট। নামেই ইউনিট। আসলে একচালা ঘর পরপর... একটানা। এমব্রয়ডারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রমেশ পাখিওয়াল ৩০ বছর ধরে এই কাজে যুক্ত। তাঁর ডিউটি হল লেবার সাপ্লাই। তিনি বললেন, সাপ্লাই করা মালের পেমেন্ট আসছে চেকে। সেই চেক আদৌ ক্লিয়ার হবে কি না, কেউ জানে না। এদিকে লেবারদের কি চেক ক্লিয়ার হওয়ার অপেক্ষায় বসিয়ে রাখা যায়? সেটা তারা শুনবে কেন? আগে এসব আমাদের ছোট ছোট ইউনিট সব নগদ টাকায় চলত। আজকাল নগদ লেনদেন বন্ধ। নোট বাতিলের পর থেকে। এসব চেক, রসিদ কি এই গরিব লোকগুলোর জন্য চলে নাকি? বিরক্ত হয়ে সবাই বন্ধ করে দিচ্ছে এমব্রয়ডারি ইউনিট। একটা কথা শুনুন, ওইসব পাকিস্তানকে হুমকি আর হিন্দু-মুসলিম কিন্তু আসল ইস্যু না। আসল প্রবলেম হল কাজ না থাকা। সুরাত এক সময় হাজার হাজার বাইরের লোককেও কাজ দিয়েছে। আজ এখানে কাজ কমছে। দলে দলে বাইরের লেবার ফিরে গিয়েছে। এর এফেক্ট নেই? অবশ্যই আছে। বললেন কংগ্রেসের টাউন সভাপতি বাবু রায়কা। সুরাত বিজেপির কাছে টাকা রোজগারের একটা কেন্দ্র। স্থানীয় মানুষের কোনও উপকার হয়নি। এতসব সত্ত্বেও ১৯৮৯ সাল থেকে জিতে আসা সিট নিয়ে বিজেপি নিশ্চিন্ত। প্রার্থী দর্শনা জরদোশ। তিনবারের এমপি। নরেশ প্যাটেল তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট। পান্দসেরের পার্টি অফিসে আগামীকালের ভোটের প্রস্তুতি তুঙ্গে। নরেশ বললেন, একটা প্রশ্ন করব? ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে সুরাত লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় থাকা সাতটা বিধানসভা সিটেই আমরা জিতলাম কীভাবে? আগে কংগ্রেস একটা বিধানসভা সিট জিতে দেখাক সুরাত থেকে!
শহরের কেন্দ্রস্থলে হীরা মাণ্ডি। সকাল ৯টা থেকে গমগম করছে। হীরে বিক্রেতা সুরেশ ত্রিবেদী বললেন, দেখুন আমি ন্যাশনাল পলিকিক্স অতটা জানি না। কিন্তু এটা জানি গুজরাতে মোদিজি প্রচুর কাজ করেছেন। আর আবার ২৬টি আসনেই জিতবেন উনি। তার মানে দেখা যাচ্ছে, পাওয়ারলুম ইন্ডাস্ট্রি মনে করছে মোদি সরকার তাদের ক্ষতি করেছে, আর হীরে ব্যবসা মনে করছে কোনও ক্ষতিই হয়নি। সুরাতে বড়লোক বনাম গরিব ব্যবসার দু’রকম মনোভাব।
এখানে হীরে ব্যবসার অবশ্য একটাই হা-হুতাশ। একজন বড় মাপের হীরে ব্যবসায়ী আজকাল আর আসেন না সুরাতে। আগে মাঝেমধ্যেই আসতেন। নিজে পরখ করতেন আসল হীরে। প্রচুর অর্ডার দিতেন। তিনি নেই। কে তিনি? নীরব মোদি!