গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
বালাকোটের জঙ্গিঘাঁটিতে হামলার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারত-পাক সীমান্তের আকাশে দু’দেশের যুদ্ধবিমানের মধ্যে ব্যাপক লড়াই হয়। সেই লড়াইতে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন পাক সেনার হাতে বন্দি হন। এদিন পাটানের নির্বাচনী জনসভায় সেই প্রসঙ্গ তুলে মোদি জানান, অভিনন্দন ধরা পড়ার পরই বিরোধীরা তাঁর বক্তব্য জানার দাবি করছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিলাম, যদি অভিনন্দন বর্তমানের কোনও ক্ষতি হয়, তা হলে মোদি তোমাদের সঙ্গে কী করেছে, তা বিশ্বকে বলে বেড়াতে হবে।’ তিনি আরও জানান, বালাকোটের ঘটনার একদিন পরেই মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছিলেন, মোদি ১২টি মিসাইল পাকিস্তানের দিকে তাক করে রেখেছেন। পরিস্থিতির অবনতি হলেই হামলা করবেন। এরপরই পাকিস্তান অভিনন্দনকে ফেরানোর কথা ঘোষণা করে। না হলে সেই রাত ‘কতল কি রাত’-এ পরিণত হতো। প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, ‘এটা আমেরিকার কথা। আমার এখন এই ব্যাপারে কিছুই বলার নেই। সময় এলে এই বিষয়ে কথা বলব।’ এরপর সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বলতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার থাকবে অথবা যাবে। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হয় আমি বাঁচব, নয় জঙ্গিরা বাঁচবে।’ তিনি দাবি করে, তাঁর থেকে মানুষই বালাকোটের জঙ্গিঘাঁটিতে বিমান হামলা চালানোর প্রত্যাশা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন পুলওয়ামার ঘটনা ঘটল, তখন দেশবাসী মোদির কাছে কী প্রত্যাশা করেছিলেন? ২৬/১১ মুম্বই হামলার পর মনমোহন সিংয়ের সরকার যা করেছিল, মোদিও সেটাই করলে কী দেশবাসী আমাকে ক্ষমা করতেন।’
দেশের সেনাবাহিনীর বীরত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য এদিনের নির্বাচনী জনসভার মঞ্চকে ব্যবহার করেই কংগ্রেসকে একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এখন কোনও কংগ্রেস নেতা এয়ার স্ট্রাইকের প্রমাণ চাইছেন না। মানুষ রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ওরা প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ মেটার পর তো ওরা প্রশ্ন করতেই ভুলে গিয়েছে।’
গুজরাতের পাশাপাশি এদিন রাজস্থানের বারমের এবং চিতোরগড়ে দু’টি নির্বাচনী জনসভা করেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানেও সন্ত্রাসবাদ এবং কংগ্রেসের ‘অপদার্থতা’র প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। এদিন শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে দেড়শোরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গও তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে। চিতোরগড়ের জনসভার মঞ্চ থেকে শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘ভারত সবসময়ই শ্রীলঙ্কার পাশে রয়েছে।’ তাঁর কথায়, ‘ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলায় শ্রীলঙ্কায় কয়েক শো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতেরা ইস্টার উপলক্ষে গির্জায় প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘যখনই আপনি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পদ্ম প্রতীকের বোতাম টিপবেন, মাথায় রাখবেন সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতেই ওই বোতাম টিপছেন আপনি।’
কংগ্রেসের উদ্দেশে তোপ দেগে তিনি জানান, কংগ্রেসের তিনটি বাস্তব হল— ‘নামদার পরিবার’, দুর্নীতি এবং যথেচ্ছ মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। কংগ্রেসের আমলে দেশের সার্বিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং সম্পদগুলির সঙ্গে সুবিচার করা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশক কংগ্রেসের উপর ভরসা রেখেছিল দেশবাসী। কিন্তু, ওরা মানুষকে ঠকিয়েছে।’ বারমেরের সভা থেকে মোদি দাবি করেন, ১৯৭১ সালেই আত্মসমর্পণকারী ৯ হাজার পাক সেনাকে মুক্তি দিয়ে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের সুযোগ হারিয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার।
অন্যদিকে, এদিন চিতোরগড়ের সভামঞ্চ থেকেই তিনি ‘জলশক্তি মন্ত্রক’ নামে আলাদা মন্ত্রক তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দেন। এর ফলে দেশের নদীগুলির জলবণ্টন সমস্যা মেটানো সম্ভব হবে বলেই আশাপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, ত্রিচির একটি মন্দিরে ভক্তদের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে সাত জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও ঘোষণা করেন তিনি।