বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কেন্দ্রাপাড়া কেন্দ্রের হাইপ্রোফাইল বিজেপি প্রার্থী বৈজয়ন্ত পান্ডাকে জোর ধাক্কা দিতে নবীন পট্টনায়েক নির্ভর করছেন অনুভবের ইমেজের উপর। কেন্দ্রাপাড়া চিরকালই কংগ্রেস-বিরোধী কেন্দ্র। কংগ্রেসের মহারথীদের এখানে বারবার হারতে হয়েছে। বসন্ত বিসোয়াল, শ্রীকান্ত জেনা, অর্চনা নায়েক... সবাই হেরেছেন। এই কেন্দ্র কখনও বিজু পট্টনায়েক এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের খালি হাতে ফেরায়নি। সেই সুবাদে এতদিন এটা ছিল বিজু জনতা দলের গড়। এই প্রথম এখানে সেই গড় চ্যালেঞ্জের মুখে। দুর্গ কি এবারও অটুট থাকবে, নাকি ভোট ব্যাঙ্ক ধসিয়ে বৈজয়ন্ত পান্ডার বিজয়রথ একইভাবে ছুটবে? সেই প্রশ্নটাই এখানে গ্রীষ্মের তপ্ত হাওয়ার মতো পাকিয়ে উঠছে।
বৈজয়ন্ত পান্ডা এখানে খুবই জনপ্রিয়। দু’বারের বিজয়ী প্রার্থী। কেন্দ্রের মানুষ তাঁকে জয় বলেই ডাকেন। শিক্ষিত এবং বিত্তশালী মানুষ। তিনি এবার নবীনের শঙ্খ-সংসর্গ ত্যাগ করে পদ্মফুলের শরণাপন্ন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তিনি দু’লাখেরও বেশি ভোটে জয়ী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৫৩ শতাংশ। কংগ্রেসের ধরণীধর নায়েক পেয়েছিলেন ৩৪ শতাংশ ভোট। সেবার বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ১০ শতাংশ। এবার জার্সি বদলে জয় বিজেপির হয়ে লড়াই করছেন। চেনা মাঠ, চেনা দর্শক। তবুও যেন খেলার মাঠে কিছুটা অস্বস্তিতে জয়। কেননা প্রতিপক্ষ আছেন বিজেডির জনপ্রিয় প্রার্থী অনুভব। তরুণ বয়সের ভোটার এবং মহিলা ভোটারদের কাছে অনুভবের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিজেপির ভয়, সেটা যেন ভোটযন্ত্রে না পড়ে। কেন্দ্রাপাড়া নবীন পট্টনায়েকের কাছে একটা প্রেস্টিজ ইস্যু। তাঁর এখানে জনপ্রিয়তা থাকলেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল তাঁকে ভাবিয়েছে। কেননা ২০১৭ সালে জেলা পরিষদের ১০টা সিট বিজেপি দখল করে নিয়েছে। তাই শান্তিতে নেই নবীন পট্টনায়েক। পঞ্চায়েত ভোটের ফল পর্যালোচনা করে বিজেপি শিবিরের নিদান হল, আর দুই থেকে আড়াই লাখ ভোট কেটে আনতে পারলেই জয় হাসিল করা অসম্ভব নয়।
বিজেপির এই কৌশলকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন এখানকার বিজেডি নেতারা। বিজেডির কেন্দ্রাপাড়া মহিলা শাখার সম্পাদিকা সবিতা সাউ বললেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাপকাঠি করে এগচ্ছে বিজেপি। ফল বের হলে বুঝতে পারবে কত বড় ভুল করেছে। এখানে পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচনে প্রতীক চিহ্নে ভোট হয় না। কিন্তু বিধানসভা এবং লোকসভা ভোট হয় প্রতীক চিহ্নে। সুতরাং শঙ্খকে হারানোর মতো শক্তি এখনও এরাজ্যে বিজেপির হয়নি।’
অনুভবের ইমেজ ভোটে কতটা সহায়ক হবে প্রশ্ন করায় উনি বললেন, ‘অনুভবের ইমেজ নিশ্চয়ই খুব বড়। কিন্তু সেটা নবীনবাবুর ইমেজের থেকে বড় নয়। জয় পন্ডা জিততেন বিজুবাবুর ইমেজের জোরে। এখন নিজেকে বাঘ ভাবছেন। আর কয়েকটা দিন পরেই বেড়াল হয়ে যাবেন।’
বিজেপিও কম আত্মবিশ্বাসী নয়। তার অনেকগুলি কারণও ব্যাখ্যা করলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক ধীরেন সেনাপতি। তিনি বললেন, জয় পান্ডা এখানে অনেক কাজ করেছেন। তাঁর এমপি ল্যাডের টাকায় এখানে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। পানীয় জলের সুরাহা করেছেন। এখানে একটা মিনি স্টেডিয়াম করেছেন। এই কেন্দ্রের বিজেডি প্রার্থীও রাজ্যসভার এমপি। মানুষের কাছ থেকে জেনে আসুন তো তিনি কটা পয়সা এই কেন্দ্রে দিয়েছেন!
কিন্তু জয় এই কেন্দ্রকে গুরুগ্রামের মতো করে তৈরি করবেন বলেছিলেন। সেটার কাজ কতদূর। ধীরেন বললেন, ‘বড় কাজ। এবার জিতে এলে নিশ্চয়ই হবে।’
প্রতিশ্রুতি বিলোচ্ছেন জয়। কিন্তু যে সাংগঠনিক জোর বিজেডির আছে, সেটা এখনও জয়ের নেই। একটু গ্রাম এলাকায় বিজেপির অস্তিত্ব খুঁজেই পাওয়া গেল না। বিজেপির আরও একটা ভয় হল, এখানে শেষ পর্যায়ের ভোট। তাই নবীন জয়কে হারাতে অন্য জায়গা থেকে এখানে ছেলে ঢুকিয়ে দেবেন। তাই শান্তিতে নেই জয় পান্ডাও।
এর মধ্যেও বিজেপির আশা আগামী ২৩ এপ্রিল এখানে প্রধানমন্ত্রী সভা করবেন। তার একটা সুফল মিলবেই। কিন্তু ভোটের দিনে কার ক্যাডার কতটা মুভমেন্ট করে, তার উপরই নির্ভর করছে জয়মাল্য উঠবে কার গলায়, জয় নাকি অনুভব!
মোট ভোটার: প্রায় ১৬ লক্ষ
২০১৪’র ভোটে জয়ী: বৈজয়ন্ত পান্ডা (বিজেডি)
ভোটের দিন: ২৯ এপ্রিল