কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
আগামী মাসে ওড়িশায় একসঙ্গে হবে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন। এবারের ভোট রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের কাছে। বিজেডির অন্দরমহলের প্রবল দ্বন্দ্ব কিছুইতেই নিয়ন্ত্রণে করতে পারছেন না। তার উপর প্রায় দল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন হেভিওয়েট নেতারা। কেউ বিজেপিতে, কেউ বা কংগ্রেসে যোগদান করছেন। এসব ছাড়াও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ার এবছর তীব্র হয়ে উঠেছে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ নবীন পট্টনায়েকের পক্ষে এতকিছুর মোকাবিলা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। পাঁচ বছর আগের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মাত্র একটি আসন পেয়েছিল। পাশাপাশি, বিধানসভা ভোটে ১৪৭ আসনের মধ্যে যেখানে বিজেডির দখলে ছিল ১১৭। সেখানে বিজেপি মাত্র ১০টি আসন পেয়ে তৃতীয়স্থানে পৌঁছে ছিল। বর্তমানে সেই বিজেপি ওড়িশার ক্ষমতা দখলের দাবি করতে শুরু করেছে। ওড়িশায় বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত অরুণ সিংয়ের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। তিনি দাবি করেন, পট্টনায়েক সরকারের পতনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার চাপে ধসে পড়বে বিজেডি।
অবশ্য কর্মীদের মনোবল বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে চওড়া হাসি। তিনি বারবার বলছেন, রাজ্যে পঞ্চম বিজেডি সরকার গঠিত হবে। লোকসভাতেও খুব ভালো ফল করবে দল। এখানেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। যদি এতটাই জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকে, তাহলে কেন বারবার বলতে হচ্ছে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিজেডিকে অতি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। রাজ্যে অনুন্নয়নের মতো ইস্যুকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি নবীন পট্টনায়েকের সরকার। তার উপর একাধিকবার খরা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলি দিনের পর দিন জনসভা করে প্রচার করেছে বিজেপি। বহুদিন আগে থেকেই ওড়িশায় রোড শো করতে শুরু করেন অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিজেডি ভেঙে নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করেছেন অমিত শাহ। অন্যান্য রাজ্যের থেকেও বেশি জনসভা এবং রোড শো করেছেন বিজেপি সভাপতি। শুধু তাই নয়, ভুবনেশ্বর, কটক, বালেশ্বর, পুরীর মতো শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভোটারদের টানতে অন্যভাবে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। রীতিমতো কর্পোরেট প্রচার চালানো হয়েছে। টিভি, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি রাস্তার মোড়ে মোড়ে বড় বড় হোর্ডিং দেওয়া হয়েছে। সেই সহ প্রচারে বিজেডি সরকারের দুর্নীতির পাশাপাশি অনুন্নয়নকে জোর দিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের কোনও নেতা নয়। প্রতিটি হোর্ডিংয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ ব্যবহার হয়েছে। এত কিছু পাল্টা প্রচারে ব্যর্থ বিজেডি। এর উপর পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফল মনোবল অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
পশ্চিম ওড়িশা চিরদিন বিজেডির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ওই অঞ্চলে পাঁচটি লোকসভা এবং ৩৫টি বিধানসভা আসন। ২০১৪ সালের বিধানসভা ভোটে চারটি আসন পেয়েছিল বিজেডি। কিন্তু অবস্থায় পরিবর্তন প্রথম নজরে পড়ে ২০১৭ সালের পঞ্চায়েত ভোটে। পশ্চিম ওড়িশায় ২০৯টি জেলা পরিষদের মধ্যে ১২৬ টি দখল করে বিজেপি। সেখানে বিজেডি ৫৬ এবং কংগ্রেস ২২। গত সোমবার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। তার মধ্যে একটি পশ্চিম অংশের বিজেপুর এবং অন্যটি উত্তর গঞ্জাম জেলার হিঞ্জিলি কেন্দ্র। বিজেডি কর্মীদের আশা, বিজেপুর থেকে নবীন পট্টনায়েক ভোটে দাঁড়ানোয় পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। হারানো ভোট তাঁদের পক্ষে আসবে। তবে সমগ্র কলিঙ্গ কতটা ধরে রাখতে পারবে বিজু জনতা দল? এর উত্তরে বিজেডির এক নেতার উত্তর, এখন প্রভু জগন্নাথই ভরসা।