নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি, ১৪ মার্চ: রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন আবার মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ানোয় ভারত ও চীনের সম্পর্কে নতুন করে ছায়া পড়তে চলেছে। নজিরবিহীনভাবে গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একই বছরে চারবার চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং এর সঙ্গে বৈঠকে করেছেন বিভিন্ন সম্মেলনে। তার মধ্যে সবথেকে হাই ভোল্টেজ বৈঠক ছিল হুয়ানে। হুয়ানে ছিল ইনফর্মাল সামিট। অর্থাৎ ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক হয়েছিল। এমনকী নদীবক্ষে ছিল নৌকাবিহার। শুধুই দুই রাষ্ট্রনায়ক। ওই একক বৈঠকে বহু ইস্যুতেই চীন ও ভারত কাছাকাছি আসার বার্তা দিয়েছিল। সেই হুয়ানের বৈঠকের পর ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নামও চালু হয়ে যায়। হুয়ান স্পিরিট। অক্টোবর মাসে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এয়ারসে জি টুয়েন্টি সম্মেলনের ফাঁকে জি জিনপিং এবং মোদির বৈঠকের পর বলা হয়েছিল ২০১৮ সাল ওই দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবথেকে উন্নতি হয়েছে। আর ২০১৯ সালে আরও ভালো হবে সেই সম্পর্ক। অথচ হুয়ান স্পিরিটকে সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ করে চীন আবার মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়ার উদ্যেোগকে আটকে দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদে। আর আজ লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে রাজনীতিতেও উত্তাপ তৈরি হয়েছে। রাহুল গান্ধী আজ সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টার্গেট করে বলেছেন, আপনি গুজরাতে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দোলনায় দুলে দুলে ছবি তুললেন, হুয়ানে গিয়ে নদীবক্ষে নৌকায় ঘুরে হাওয়া খেলেন, চীনের কাছে নত হলেন, ডোকালায় ভারতের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিলেন সম্পর্ক ভালো করার জন্য, তার পরিণাম কী এই?
মাসুদ আজহারকে এখনও চীন এভাবে আড়াল করতে সক্ষম হল? রাহুলের দাবি প্রধানমন্ত্রী এখনই চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিন। যাতে চীন উপলিব্ধি করে ভারতের মানুষের তীব্র ক্রোধ। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী চীনকে যে ভয় পান সেটা আগেই প্রমাণিত। তাই তিনি কিছুই করতে পারবেন না। রাহুলের এই আক্রমণের জবাবে পালটা বিজেপিও তোপ দেগেছে। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, চীন মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসবাসী আখ্যা দেওয়ার উদ্যোগকে আটকে দিয়েছে এই সংবাদে গোটা ভারতবাসী অত্যন্ত হতাশ। কিন্তু রাহুল গান্ধী এত খুশি কেন? তাঁর দেশের প্রতি সামান্য সম্মান প্রদর্শন নেই। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপি আজ আরও বলেছে, চীনকে এভাবে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দিয়েছিলেন কে? জওহরলাল নেহরু। সুতরাং রাহুলের ইতিহাস জ্ঞান নেই। এই অভিযোগের পাল্টা উত্তর দিয়ে কংগ্রেস বলেছে, তাহলে নরেন্দ্র মোদি সেই নেহরুর পথ অনুসরণ করেই চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করার এত চেষ্টা করছে কেন? মোদির তো উচিত ছিল উল্টো পথে হাঁটা! তিনি তো আরও বেশি বেশি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সখ্য স্থাপন করে সেটা আবার ঘোষণাও করছেন। সব সরকারকে ছাপিয়ে গিয়েছেন চীনকে তুষ্ট করার পদক্ষেপে। সোজা কথায় চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়েও শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক টানাপোড়েন।