সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২৩ ফেব্রুয়ারি: কাশ্মীর অগ্নিগর্ভ! গতকাল মধ্যরাত থেকে চলছে বড়সড় অভিযান। মধ্যরাতেই গোটা উপত্যকা তটস্থ হয়ে যায় আকাশে অবিরত হেলিকপ্টার ওড়ার শব্দে। সঙ্গে হাইওয়ে জুড়ে সাইরেন আর হুটার। সকালেই জানা যায় একের পর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতা, কর্মী এবং বিভিন্ন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী স্থানীয় সংগঠনের নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট, জামাত ই ইসলামিয়া, হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা ইয়াসিন মালিক, ডক্টর হামিদ ফায়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোটা কাশ্মীরে নেমে পড়েছে হাজার হাজার আধাসেনা। দিল্লি থেকে আজ সকালের পরই সব মিলিয়ে ১০ হাজার আধাসেনাকে বিমানে করে শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। আরও আড়াই হাজার আধাসেনাকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে যাওয়ার জন্য। সিআরপিএফ, বিএসএফ ছাড়াও ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার ফোর্সে একের পর এক কোম্পানি যাচ্ছে শ্রীনগর। শ্রীনগর ও মূলত দক্ষিণ কাশ্মীরের আকাশে সারাদিন ধরে চলছে হেলিকপ্টারের নজরদারি। প্রবল তল্লাশি শুরু হয়েছে। বস্তুত জানা যাচ্ছে গতকাল মধ্যরাত থেকে এই আচমকা তল্লাশি অভিযান এবং আকাশে চপার উড়তে দেখে কাশ্মীরে সকাল থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সকালে কোনও মার্কেট খোলেনি। হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় যে কোনও দোকান থেকে নিত্যব্যবহার্য মালপত্র কিনে নেওয়ার। কাশ্মীরের ডিজি অবশ্য বিবৃতি জারি করে বলেছেন, অযথা গুজব যেন কেউ না ছড়ায়। যা হচ্ছে এটা রুটিন অভিযান। কোনও সাধারণ কাশ্মীরির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না। আর সবই স্বাভাবিক চলছে। এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করা হলেও গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু জামাত ই ইসলামিয়ার প্রধানকে গ্রেপ্তার করায় কাশ্মীরের রাস্তায় রাস্তায় জামাত সমর্থকরা নেমে পড়েছে। উল্লেখ্য জামাতকে হিজবুল মুজাহিদিনের রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। যদিও সেকথা অস্বীকার করে সর্বদাই জামাত নেতৃত্ব বলে তারা আদতে সামাজিক একটি সংস্থা। জামাতের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে কাশ্মীরে এবার দীর্ঘমেয়াদী কোনও অচলাবস্থা তৈরি করার দিকেই এগোচ্ছে কেন্দ্র। এসব হল তারই চক্রান্ত।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা এই গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা শুরু করেছেন। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এটা কী শুরু করেছে? হুরিয়ৎ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতবাদী নেতাদের এভাবে অবাধে গ্রেপ্তার করার কারণ কী? মুফতির প্রশ্ন, তাহলে কি কাশ্মীরকে সম্পূর্ণ মিলিটারি রাজ্যে পরিণত করছে কেন্দ্রীয় সরকার? এর ফল অত্যন্ত খারাপ হতে চলেছে। পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজিদ লোন বলেছেন, ১৯৯০ সালে এই একই প্রক্রিয়া একবার নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনওভাবেই জঙ্গি দমন করা যায়নি। তাই কাশ্মীরে জোর করে দমনমূলক নীতি নেওয়া উচিত নয়। তাহলে হিতে বিপরীত হবে। তার থেকে আলোচনার রাস্তাই একমাত্র পথ। কাশ্মীর যে পুরোদস্তুর বারুদের স্তূপে পরিণত করা হয়েছে, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সেরকমই খবর পেয়েছে। বিশেষ করে সবথেকে উদ্বেগজনক বার্তা হল বিপুল পরিমাণ আরডিএক্স ঢুকেছে উপত্যকায়। আবার একইসঙ্গে জয়েশ ই মহম্মদের একঝাঁক জঙ্গি গোপনে ঢুকে লুকিয়ে আছে। পুলওয়ামার হামলায় যে আত্মঘাতী জঙ্গি প্রধান আক্রমণকারী সেই আদিল আহমেদ দার স্থানীয় তরুণ। তাই তাকে যারা ট্রেনিং দিয়েছে এবং এই আক্রমণের আগে যে গ্রুপটি ঢুকেছে তারা কোথায়? সেই জঙ্গিদের খোঁজেই এবং বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র খুঁজে বের করতেই তুমুল অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরের অন্দরে যেমন অভিযান চলছে, তেমনই অতিরিক্ত বিএসএফ বাহিনী নিয়ে এসে গোটা কাশ্মীর সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা সিল করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কারণ একদিকে যেমন তল্লাশি অভিযান চলছে তেমনই যাতে একজনও সীমান্ত পেরিয়ে পালাতে না পারে সেটাই লক্ষ্য। এই কারণেই ১০ হাজার আধা সেনা নেমেছে। আসছে আরও বাহিনী। মোতায়েন করা হচ্ছে সেনাও। শুধু কাশ্মীরেই নয়, বিগত কয়েকদিন ধরেই দিল্লির আকাশে নিয়ম করে এয়ারফোর্সের বিমানের মহড়া চলছে। সেই জল্পনাও তুঙ্গে। বায়ুসেনা অবশ্য জানিয়েছে সবটাই রুটিন মহড়া!