সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ১৩ ফেব্রুয়ারি: রাফাল নিয়ে লাগাতার বিরোধীদের আক্রমণ ও একের পর এক গোপন তথ্য ফাঁসের জেরে রীতিমতো কোণঠাসা মোদি সরকারের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এল ক্যাগ রিপোর্ট। ষষ্ঠদশ লোকসভার সর্বশেষ অধিবেশনের শেষ দিনে রাফাল নিয়ে চলা প্রবল রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই আজ ক্যাগ রিপোর্ট পেশ করা হয় সংসদে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউপিএ আমলে যে মূল্যে ১২৬টি এয়ারক্র্যাফট ক্রয়ের চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছিল, নরেন্দ্র মোদি সরকারের আমলে সংশোধিত চুক্তিতে ৩৬টি এয়ারক্র্যাফট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেই তুলনায় ২.৮৬ শতাংশ সস্তা দরে রাফাল চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। উল্লেখ্য, ইউপিএ সরকারের তুলনায় মোদি সরকার ৯ শতাংশ কম দরে রাফাল এয়ারক্র্যাফট কিনছে, এই দাবি করে এসেছে এতদিন কেন্দ্র। আজ ক্যাগ রিপোর্ট সেই দাবিকে অবশ্য নস্যাৎ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাফালের বেসিক প্রাইস উভয় পক্ষের একই রয়েছে। কিন্তু ফ্লাইঅ্যাওয়ে কন্ডিশনের যুদ্ধবিমান (অর্থাৎ যন্ত্রাংশ নয়, সম্পূর্ণ উড়তে সক্ষম) যে দরে মোদি সরকার চূড়ান্ত করেছে সেটি ইউপিএ সরকারের তুলনায় সস্তা। পাশাপাশি, এনডিএর কিছু কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করা হয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে।
ক্যাগ রিপোর্টে বলা হচ্ছে, ফ্রান্সের এমন কয়েকটি শর্ত ভারত সরকার মেনে নিয়েছে যেগুলি অগ্রাহ্য করা হলে এই দাম আরও কমে যেত। সামগ্রিক রাফাল চুক্তির মধ্যে ১৪টি আইটেমের মধ্যে বেসিক এয়ারক্র্যাফট সহ তিনটি আইটেমের সমান দাম ধার্য হয়েছে। অর্থাৎ দুই সরকারের আমলেই একই মূল্য। একইভাবে চুক্তির স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সাতদিনের মধ্যে এয়ারক্র্যাফট ডেলিভারি হবে, সেই সময়সীমাও প্রায় এক। এনডিএ আমলের চুক্তিতে যে বিষয়টি নিয়ে ক্যাগ প্রশ্ন তুলেছে সেটি হল ফ্রান্স সরকার পেমেন্টের ক্ষেত্রে লেটার অব কমফর্টে রাজি হয়েছে। কিন্তু সার্বভৌম গ্যারান্টি শর্তে রাজি হয়নি। যদিও ওই শর্তে রাজি হলে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হত। ২০০৭ সালে রাফাল ক্রয়ের সময় একটি সেফগার্ড গ্যারান্টি ক্লজ ছিল। সেটি ২০১৬-এর চুক্তিতে নেই। ক্যাগ রিপোর্টকে হাতিয়ার করে অবশ্য রাজনৈতিক লড়াই কমেনি। বরং আরও তীব্র হয়েছে। আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি থেকে আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, কংগ্রেস সভাপতির লাগাতার মিথ্যাচার এবার সম্ভবত খতম হবে। কারণ ক্যাগ রিপোর্টেই স্পষ্ট, মোদি সরকার অনেক সস্তায় ৩৬টি রাফাল কিনেছে। আসলে ডিফেন্স ডিলে কমিশন নেই, এটা কংগ্রেস ভাবতেই পারে না।
অন্যদিকে, পাল্টা রাহুল গান্ধী বলেছেন, আগে মোদি সরকার জবাব দিক গোটা রাফাল ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত বায়ুসেনার তিনজন উচ্চপর্যায়ের অফিসার কেন স্পষ্ট নোট লিখে বেশ কয়েকটি চুক্তির শর্তে আপত্তি তুলেছিলেন? রাহুল আজ তথ্যপ্রমাণের নোট দেখিয়ে বলেন, এই তিন অফিসার বলেছিলেন, চুক্তিতে কয়েকটি শর্ত মানা হচ্ছে কেন? ভারতের স্বার্থে নয় ওগুলি। রাহুল বলেন, বায়ুসেনার অফিসারদের আপত্তি সত্ত্বেও কেন অগ্রসর হয়েছে সরকার? কার স্বার্থে? অনিল আম্বানির? তবে শেষ দিনে ক্যাগ রিপোর্ট পেশ করার ফলে রাফাল নিয়ে লোকসভার অন্দরের লড়াই সমাপ্ত হয়ে গেল। এবার লড়াই ভোটের ময়দানে।