পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ভারতে লোকসভা ভোট এখন শিয়রে। সেই ভোটে আম আদমিকে কতটা আচ্ছে দিন নরেন্দ্র মোদি এনে দিতে পেরেছেন, তার একটা বড় পরীক্ষা। কিন্তু সেই ভোটের মাস তিন-চার আগে আন্তর্জাতিক সংগঠন অক্সফাম যা রিপোর্ট প্রকাশ করল, তাতে বিরোধীদের তূণে আরও নতুন তীর চলে এল বলাই যায়। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের পাঁচদিনের বার্ষিক বৈঠক শুরুর আগে যে রিপোর্ট অক্সফাম প্রকাশ করেছে, তাতে চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য। ভারতের আয় বৈষম্য বেআব্রু করে দিয়েছে রিপোর্ট।
কী বলছে সেই রিপোর্ট? ভারতের সবচেয়ে বিত্তশালী ব্যক্তির নাম মুকেশ আম্বানি। তাঁর সম্পদ নিয়ে চর্চাও কম নয়। কিন্তু যেটা অজানা সেটা হল, কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিতভাবে চিকিৎসা, জনস্বাস্থ্য, পয়ঃপ্রণালী ও জল সরবরাহ খাতে ব্যয় করে মোটামুটি ২.০৮ লক্ষ কোটি টাকা। আর মুকেশ আম্বানির একার সম্পদের পরিমাণ ২.৮ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, দেশের শীর্ষ এক শতাংশ ধনকুবেরের হাতেই রয়েছে মোট জাতীয় সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি সম্পদ। শতাংশের বিচারে এর পরিমাণ ৫১.৫৩ শতাংশ। সেরা ১০ শতাংশ বিত্তশালীর হাতে রয়েছে মোট জাতীয় সম্পদের ৭৭.৪ শতাংশ সম্পদ। অর্থাৎ, ধনী ব্যক্তি যত ধনী হয়েছেন, সম্পদ তত বেশি করে কুক্ষিগত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের একেবারে তলায় থাকা ৬০ শতাংশ মানুষ জাতীয় সম্পদের মাত্র ৪.৮ শতাংশের অধিকারী। ভারতের সেরা নয়জন ধনকুবেরের সম্পদের পরিমাণ একেবারে গরিব ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের সমান। আকর্ষণীয় তথ্য হল, এই এক শতাংশ ধনকুবের যদি মাত্র ০.৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতেন, তবে সরকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যখাতে আরও ৫০ শতাংশ বরাদ্দ বাড়াতে পারত।
অক্সফামের তথ্য বলছে, গত বছর ভারত নতুন করে ১৮ জন ধনকুবের পেয়েছে। ফলে এখন ভারতীয় ধনকুবেরের সংখ্যা ১১৯। এই ধনকুবেরদের সামগ্রিক সম্পদের পরিমাণ ২৮ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০০৮ সাল থেকেই বিশ্বজুড়েই আর্থিক সঙ্কট দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় ধনকুবেররা স্রেফ গতবছরেই প্রায় ১২৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদ বাড়াতে পেরেছে। এক বছরের হিসেবে এটা একটা রেকর্ড। প্রতিদিন নিয়ম করে মোদি-জেটলি বলে আসছেন বিশ্বজোড়া আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও হু হু করে অগ্রগতি হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতির। কিন্তু অক্সফামের রিপোর্ট দেখিয়ে দিচ্ছে এই অগ্রগতি হচ্ছে শুধুমাত্র ভারতীয় ধনকুবেরদেরই। রিপোর্টে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশেই এখন ভালো মানের শিক্ষা ও চিকিৎসাকে বিলাসবহুল পণ্যের তালিকায় রাখতে হচ্ছে। কারণ এই ভালো মানের শিক্ষা ও চিকিৎসা শুধুমাত্র দেশের ধনীরাই পেতে পারেন। গরিবদের পক্ষে ওই শিক্ষা বা চিকিৎসার কোনও সুযোগই নেই। অর্থাৎ মোদি শাসনের প্রায় পাঁচ বছরেও দেশের অর্থনীতিক সামগ্রিক হাল-হকিকতের তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরং ফারাক ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে। আচ্ছে দিনের আশায় দিন গোনা মানুষের হাল মোটেও ফেরেনি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৪ সাল থেকে ঋণফাঁদে ডুবে থাকা মানুষদের কোনও তারতম্য হয়নি। ১০ বছর ধরেই দেশের সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ ঋণের ফাঁদে রয়েছেন। রিপোর্টেই বলা হয়েছে, গরিব পরিবারের এক বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মৃত্যুহার ধনীদের তুলনায় তিনগুণ। অক্সফামের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর উইনি বায়ানিমার এই তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের কয়েকজন ধনী ব্যক্তি তাঁদের সম্পদের পরিমাণ ক্রমশই বাড়াচ্ছে। আর গরিবরা তাঁদের অন্ন সংস্থান বা সন্তানদের চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় করতে মাথা খুঁড়ে মরছেন। তিনি বলেন, যদি এই এক শতাংশ ধনী ও বাকি ভারতীয়দের আয়ের মধ্যে বৈষম্য চলতেই থাকে, তবে দেশের সামাজিক ও গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোটাই ভেঙেচুরে যাবে। সংস্থার ভারতীয় প্রধান অমিতাভ বেহর বলেছেন, এই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট সরকার এই আয়ের বৈষম্য বাড়াতে সাহায্য করেছে। সরকার একদিকে স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো জনস্বার্থের মতো বিষয়ে ব্যয়বরাদ্দ কমিয়েছে। অন্যদিকে ধনীদের করছাড়ের ব্যবস্থা করেছে। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, আয়-বৈষম্যের এই প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহিলা ও বালিকারা।
ধনী-দরিদ্রের এই ফারাক বৃদ্ধি অবশ্য সমগ্র বিশ্বজুড়েই হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে টেনে আনা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজসকে। বলা হয়েছে, তাঁর সম্পদ এই এক বছরে বেড়েছে ১১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অঙ্কটা ভালো করে বোঝাতে টেনে আনা হয়েছে আফ্রিকার অন্যতম গরিব দেশ ইথিওপিয়াকে। ওই দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ১১ কোটি। বেজসের সম্পদের এক শতাংশ যা হয়, সমগ্র ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের পরিমাণ ততটাই।