বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
মমতার উদ্যোগে মোদি বিরোধী জোটকে ‘কৃত্রিম’ এবং ২০১৯ সালের লোকসভার লড়াইকে আদতে ‘মোদি বনাম বিশৃঙ্খলা’ বলে কটাক্ষের করাত চালানোর চেষ্টা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, মোদির মতো ব্যক্তিত্বের ভয়েই ব্রিগেডে বিরোধীরা জড়ো হয়েছিল। বিরোধী জোটকে নেতিবাচক এবং মোদি ইতিবাচক মন্তব্যে তুলনা টেনে আদতে আগামী লোকসভার মানুষ ফের নরেন্দ্র মোদির মতো জনপ্রিয়, ডায়ানামিক, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাবানকেই নির্বাচন করবেন বলেও একপ্রকার বাজি ধরেছেন জেটলি।
কেবল ব্লগ বা ট্যুইটারে আক্রমণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিগ ব্রিগেডে’র সমালোচনা নয়। পাল্টা জবাব দেওয়ার ঢঙে এনডিএ’ও জোটের সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঠিক হয়েছে বিহারের পাটনায় হবে ওই সভা। একমঞ্চে থাকবেন মোদি, নীতীশকুমার এবং রামবিলাস পাসোয়ান। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দরুণ মোদি এবং নীতীশকুমারকে বেশ কয়েকবার এক মঞ্চে দেখা গেলেও রাজনৈতিক ময়দানে এই প্রথম দেখা যাবে উভয়কে। লোকসভা ভোটের আগে যা গুরুত্বপূর্ণই শুধু নয়, বিহারের ৪০টি আসনের ভোটারদের মন জয় করতে এনডিএ জোটের ওই সভাকে বৃহদাকার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে মার্চের গোড়ার দিকে ওই সভা হবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডের ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ার লক্ষ্যে মমতার উদ্যোগে ঐতিহাসিক সভার পরেই বিজেপি তথা এনডিএ’র ঘুম ছুটে গিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে চাপে রাখতে এনডিএ জোটের ওই সভার আগেই আবার কংগ্রেসের উদ্যোগে পাটনাতেই গান্ধী ময়দানে বিরোধী জোটের সভা হবে বলে ঠিক হয়েছে। যেখানে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, আরজেডি’র তেজস্বী যাদব, উপেন্দ্র কুশওয়া, জিতিনরাম মাঝির মতো নেতা উপস্থিত থাকবেন।
ব্রিগেডের সভা নিয়ে কটাক্ষ এবং আক্রমণ করতে গিয়ে মোদির যেমন ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, একইসঙ্গে বিরোধীদের মধ্যে কৌশলে রাহুল বিরোধিতার বীজ পোঁতারও চেষ্টা করেছেন অরুণ জেটলি। ব্রিগেডের সভার শুভেচ্ছা জানিয়ে রাহুল, সোনিয়া বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি দলের দুই এমপিকে কলকাতার মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করতেও পাঠিয়েছিল কংগ্রেস। তবুও জেটলির সওয়াল, মমতার পাশে রাহুল গান্ধী, মায়াবতী এবং কেসিআরকে দেখা যায়নি। যাঁদের দেখা গিয়েছে,তাদের বেশিরভাগই অশীতিপর উল্লেখ করে রাজনীতির ময়দানে কার্যত শেষ ইনিংস খেলছেন বলেই বোঝাতে চেয়েছেন জেটলি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নেতিবাচক আচরণ মানুষ অপছন্দ করে। আর বিরোধীদের ব্রিগেডের আচরণ ছিল তাই। ফলে সেটি কোনওভাবেই মোদি বিরোধীতায় কাজে দেবে না। দ্বিতীয়ত সংখ্যার গণিতে যদি রাজনৈতিক জয়ের কথা ভেবে থাকে বিরোধীরা, সেখানেও মোদির রসায়নের কাছে বিরোধী জোটের উদ্যোগ ধোপে টিকবে না। এই প্রসঙ্গেই মোদি বন্দনা করতে গিয়ে ব্লগে জেটলি একাত্তর সালের অটল ইন্দিরার কথা বলেছেন। কেন্ত্রীয় অর্থমন্ত্রীর বয়ান, ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় আমি তখন ছাত্র। আমরা বিরোধীরা ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে মহাজোট গড়েছিলাম। আমাদেরও অনেক তাবড় নেতা ছিল। বাড়তি পাওনা ছিল কংগ্রেসের বিভাজন। কিন্তু ভোটে কি হল? প্রবল প্রতিপত্তিতে জিতলেন ইন্দিরা গান্ধী। ২০১৯ কি একাত্তরের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? প্রশ্ন তুলে নির্বাচনী লড়াইকে তাৎপর্যপূর্ণ তর্কে পৌঁছে দিয়েছেন জেটলি।
বিপর্যয় অনিবার্য। তা বুঝতে পেরে গিয়েছে। ব্রিগেড থেকে সেই বার্তা পেয়ে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে শঙ্কিত বিজেপি। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিসহ কেন্দ্রের শাসক দলের নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে আক্রমণ করে চলেছে। এমনই দাবি তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্যোপাধ্যায়ের।
গত শনিবার ব্রিগেডে গোটা দেশের তাবড় অবিজেপি নেতৃত্ব একমঞ্চে হাজির হয়েছিলেন। যার উদ্যোক্তা ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন নেতারা। পার্থবাবুর দাবি তৃণমূল নেত্রীসহ বিরোধীদের ওই ঐক্যেই ভয় পেয়েছে বিজেপি। তারই প্রতিক্রিয়ায় গত দুদিন যাবৎ বিরোধীদের সমালোচনায় সরব হয়েছেন মোদি। এদিন দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও ব্রিগেডের সমাবেশকে যেভাবে কটাক্ষ করেছেন তাতেই স্পষ্ট ওঁরা আতঙ্কিত। তাই ব্রিগেডের সাফল্য ওদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে বলে মনে করেন তৃণমূল মহাসচিব।