সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ১১ জানুয়ারি: অবসরের ২০ দিন আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন পদচ্যুত সিবিআই ডিরেক্টর অলোক ভার্মা। মোদি সরকারের নির্দেশকে নস্যাৎ করে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে পুনরায় সিবিআই কর্তার চেয়ারে বসানোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই উচ্চপর্যায়ের কমিটির বৈঠক ডেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের রিপোর্টে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে, এই কারণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও লোকসভার বিরোধী দলনেতার কমিটি তাঁকে সরিয়ে দেয়। যদিও লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে নোট দিয়েছিলেন। সেই নোটে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের যে রিপোর্টকে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে সেখানেই বলা হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আরও তদন্তের প্রয়োজন। সুতরাং তাঁকে সরিয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু বাকি দুই সদস্যের মত যেহেতু অপসারণের পক্ষে তাই অলোক ভার্মাকে সরতেই হয়। গতকালই তাঁকে সিবিআই প্রধানের পদ থেকে পাঠানো হয় দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল পদে। অলোক ভার্মা সেই পদ গ্রহণ না করে আজ ইস্তফা দিয়েছেন। ইস্তফাপত্রে তিনি সরকার এবং সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। অলোক ভার্মা বলেছেন, আমাকে যেভাবে সরানো হয়েছে ও সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের রিপোর্টকে হাতিয়ার করে যেভাবে বদনাম করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে সিবিআইকে কতটা খারাপভাবে এই সরকার চালনা করছে। মোদি সরকারকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে অলোক ভার্মা বলেছেন, এটা রেকর্ড হয়ে রইল যে শাসক দলের মনোনীত সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের মাধ্যমে সিবিআইকে কীভাবে চাপে রাখা হয়। যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি পদচ্যুত করেছে, তারা একবারও আমাকে কমিটির সামনে ডাকেনি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি। আর যে সিবিআই অফিসারের অভিযোগে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের রিপোর্টে আমাকে দায়ী করা হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধেই যে দুর্নীতির তদন্ত চলছে সেকথাও কমিটি ভুলে গিয়েছে। উল্লেখ্য, আজ অলোক ভার্মার এই ইস্তফা দেওয়া এবং গতকাল তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা সরকারকে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস আজও বলেছে, অলোক ভার্মাকে একদিনও সিবিআই প্রধানের পদে রেখে দেওয়ার অর্থ হল রাফাল নিয়ে তদন্ত শুরু হয়ে যেতে পারে। যা নিয়ে মোদিজি আতঙ্কিত। তাই তাঁকে সরতে হয়েছে। এদিকে গতকাল অলোক ভার্মাকে সরিয়ে দেওয়ার পরই সিবিআই প্রধানের পদে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে নাগেশ্বর রাওকে। স্বপদে ফিরে আসার পর অলোক ভার্মা যতগুলি বদলির অর্ডার করেছিলেন নাগেশ্বর রাও তা বাতিল করে দিয়েছেন। বস্তুত সিবিআইয়ের অন্দরে দুই শিবিরের চাপানউতোরে অচলাবস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অলোক ভার্মাকে সরিয়ে দেওয়ার পর স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার শিবির উল্লসিত হয়েছিল। কিন্তু আজ রাকেশ আস্থানার জন্যও এসেছে দুঃসংবাদ। তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হওয়া তদন্ত বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে তিনি দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। দিল্লি হাইকোর্ট আজ জানিয়েছে সেই তদন্ত বন্ধ হবে না। প্রশ্ন, এবার রাকেশ আস্থানাকে কি গ্রেপ্তার করা হবে?