বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হওয়া সংখ্যালঘু অ-মুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার লোকসভায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৬ পাশ হয়েছে। এরপরেই অসম সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিল প্রত্যাহারের দাবিতে এদিন সকাল থেকেই রাস্তা ও রেল অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। গুয়াহাটিতে অখিল গগৈয়ের কৃষি মুক্তি সংগ্রাম সমিতি ও অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ৭০টি সংগঠনের সদস্যরা কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসগুলির সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিধানসভার সামনে ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়েন অনেকে। গোলাঘাটেক নুমালিগড় এলাকায় অসম ঐক্য মঞ্চের সদস্যরা পোশাক খুলে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রণজিৎ দাসকে কালো পতাকা দেখান আসুর সদস্যরা। কটন ও ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা।
ডিব্রুগড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। গোর্খা মহোৎসবে যোগদানকারী মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়ালের পথ আটকানোই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। কিন্তু তার আগেই বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় পুলিস। এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘বেশ কয়েকবার সতর্ক করার পরেও বিক্ষোভকারী পিছু না হটায় পরিস্থিতি সামাল দিতে মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়। রবার বুলেটও ছোঁড়া হয়। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে কিছু বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।’
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল পাসের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল আসু এবং নেসো। শতাধিক সংগঠন তাদের ডাকা এই ধর্মঘটকে সমর্থন করে। গত সোমবারই অসমের বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল অসম গণ পরিষদ। তারাও এই ধর্মঘটকে সমর্থন করে। এই বিল পাসের ফলে অসমের জনজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে দাবি করে পদত্যাগ করেন বিজেপি মুখপাত্র মেহদি আলম বোরা। বিল নিয়ে বিজেপি সরকারের অপসারণ দাবি করে নতুন ভোটের দাবি তোলেন অগপ নেতা তথা অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মোহন্ত। যদিও এই বিলকে সমর্থন না করাটা অগপ’র ‘ঐতিহাসিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেন রাজ্যের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা।
এদিকে, নাগরিকত্ব বিল ঘিরে প্রতিবাদ চরমে ওঠে ত্রিপুরাতেও। বেশ কিছু জায়গায় পুলিসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিস সূত্রে খবর, এই ঘটনায় সাতজন বিক্ষোভকারী জখম হন। তাঁদের মধ্যে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের এক জওয়ান ছাড়াও রয়েছেন ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফেডারেশনের ছ’জন সদস্য। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে মাধববাড়ি সহ বেশ কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। দু’দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এসএমএস এবং মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের খোঁজে তল্লাশিতে নামে পুলিস। পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়া থানার অন্তর্গত মাধববাড়ি ও দশরমবাড়ি এলাকায় তল্লাশি চালানোর সময় একটি দেশি বন্দুক ও একটি ভোজালি উদ্ধার হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। তিনি আরও জানান, সংঘর্ষ ও হিংসা পরিস্থিতি রুখতে বিভিন্ন উত্তেজনাপ্রবণ জায়গায় টহল দিচ্ছে অসম রাইফেলস এবং রাজ্য পুলিসবাহিনী। বুধবার এসপি অজিতপ্রতাপ সিং জানান, সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
মঙ্গলবার লোকসভায় এই বিল প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লোকসভায় জানান, নাগরিকত্ব বিল পাশ হওয়ার ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে এলে কেবল অসমেই নয়, দেশের যে কোনও জায়গায় থাকতে পারবেন। নাগরিকত্বের দাবি করতে পারবেন। আগে ১২ বছর এদেশে থাকলে বহিরাগতরা নাগরিকত্বের দাবি করতে পারতেন। এবার থেকে তাঁরা সাত বছরেই আর্জি জানাতে পারবেন। রাজ্য সরকারের সুপারিশ মেনেই আবেদনকারীদের বিষয়ে যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে নাগরিকত্বের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের পরেই আশঙ্কিত হয়ে পড়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্য। ত্রিপুরা আংশিকভাবে এই বিলের বিরোধিতা করে। বিল খতিয়ে দেখার আর্জি জানায় মিজোরাম, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ড। জানা গিয়েছে, এই বিল পাশ হলে রাজ্যে বাঙালিদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে মেঘালয় ও নাগাল্যান্ড। বাংলাদেশ থেকে আসা বৌদ্ধ চাকমারাও এই বিলের সুযোগ নিতে পারেন বলে চিন্তিত মিজোরামও। নতুন বিল লাগু হলে রাজ্যে চাকমা ও তিব্বতিদের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করে অরুণাচল প্রদেশও। রাজ্যে অনুপ্রবেশ রুখতে ইনার লাইন পারমিট ব্যবস্থার দাবি তোলে মণিপুর।