পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
নবান্ন সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে সারাদিন ধরে বেতন কমিশন নিয়ে জল্পনা চলে। কাজের ফাঁকে টিভি চ্যানেলে বা স্মার্টফোনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী সভায় কী বললেন, তা জানতে উদগ্রীব ছিলেন কর্মীরা। ঘোষণার পর বেতন বৃদ্ধি কী হতে পারে, তার হিসেবনিকেশ করতে ব্যস্ত ছিলেন অনেক কর্মী। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী যাওয়ার কিছু সময় আগে বেলা তিনটে নাগাদ নবান্নে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার। নবান্নে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এদিন যে কিছু একটা হতে চলেছে, সেব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যান কর্মীরা।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির মধ্যে। তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কমর্চারী সংগঠন এতে খুশি হলেও সিপিএম প্রভাবিত কো-অর্ডিনেশন কমিটি সহ কয়েকটি সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বকেয়া ডিএ দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছু না বলায় ওই সংগঠনগুলি অসন্তুষ্ট। ঘোষণার পরে অনেকটা ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে বলে তাদের দাবি। তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠনের দুই আহ্বায়ক দিব্যোন্দু রায় ও সৌম্য বিশ্বাস বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ঐতিহাসিক। সারা ভারতে কোথাও পে কমিশনের এরকম সুবিধা দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের তুলনায় রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনেক বেশি সুবিধা পাবেন বলে তাঁদের দাবি।
তৃণমূল বিরোধী সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি অবশ্য এটা মানতে চাইছে না। বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াই চালিয়েছে কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ। তাদের করা মামলার রায়ে স্যাট রাজ্য কর্মীদের কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বলেছে। বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগে বকেয়া ডিএ মেটাতে বলেছে স্যাট। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ডিএ (বকেয়া সহ), বাড়ি ভাড়া ভাতা প্রভৃতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কিছুই বলেননি। আমরা অপেক্ষা করছি। তবে বেতন কমিশনের সুপারিশ কেন্দ্রীয় সরকারের মতো ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকর করতে হবে। বকেয়া ডিএ মেটাতে হবে। একই দাবি করেছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিনহা। ডিএ সহ অন্যান্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূল প্রভাবিত ফেডারেশনের প্রবীণ নেতা, মেন্টর কমিটির আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তীও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও ‘প্রকৃত সময়’ থেকে বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার কথা বলেছেন।
তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের নেতারা অবশ্য বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী তো এদিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, আইনি জটিলতার জন্য ডিএ নিয়ে তিনি কিছু বলছেন না। পে কমিশন এখনও কাজ চালিয়ে যাবে। আগামী দিনে সরকারি কর্মীদের জন্য যে আরও কিছু ঘোষণা হতে পারে, তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই কর্মীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। কেন্দ্রীয় সরকার কয়েক মাস পর তা কার্যকর করলেও জানুয়ারি থেকে বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মীদেরও নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ ওই সময় থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেছেন, আগামী জানুয়ারি থেকে পে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বেতন দেওয়া হবে। ২০১৬ থেকে যে বকেয়া হয়েছে, তা দেওয়া নিয়ে এদিন কিছু বলেননি তিনি। তাই কর্মী মহলে বকেয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তা আছে। এর আগের পে কমিশনের সুপারিশ ২০০৬ সালের জানুয়ারির মাসের বদলে ২০০৯-এর এপ্রিল থেকে চালু করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। এক বছরের বকেয়া তিন কিস্তিতে মেটানো হয়েছিল। ২৭ মাসের বকেয়া না দিয়ে ‘নোশনাল এফেক্ট’ দেওয়া হয়েছিল।