কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
বৃহস্পতিবার এনআরসি ইস্যুতে মহানগরীর পথে মিছিলে হেঁটে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জীবদ্দশায় সেই প্রক্রিয়া এখানে নৈব নৈব চ। এদিন তাঁর স্পষ্ট বার্তা, আর বঙ্গভঙ্গ এবং দেশভাগ হতে দেব না। আমি যতদিন বেঁচে আছি এনআরসি করতে দেব না। দলকে তৈরি করে গিয়েছি, আমি মারা যাওয়ার পর নতুন প্রজন্ম তা ঠেকাবে। গেরুয়া শিবিরের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, আগুন নিয়ে খেলবেন না, সবাই তৈরি দেশকে রক্ষা করতে। ভাষা, ধর্ম যাই হোক না কেন, বাংলায় যারা রয়েছে, তারা সবাই এখানকার নাগরিক। রাজ্য বিজেপি সভাপতির নাম না করে পাল্টা চ্যালেঞ্জও ছুঁড়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, দু’কোটি লোককে বাদ দেবেন! দু’কোটি ছাড়ুন! দু’টো লোকের গায়ে হাত দিয়ে দেখান। এজেন্সি (পড়ুন সিবিআই, ইডি, আয়কর) কোথায় থাকে, আর মানুষ কোথায় থাকে দেখবেন। ভয় দেখিয়ে, বন্দুক দেখিয়ে অসমের মানুষকে চুপ করিয়ে রাখা যায়, বাংলায় তা হবে না। বাংলা প্রতিবাদী, বাংলা গর্জে ওঠে। অনেক বন্দুক, গুন্ডা আর ডান্ডা আমরা দেখেছি। স্পষ্ট বলে যাই, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার ভিত্তিতে এনআরসি মানব না, কিছুতেই না।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারপর্বে পদ্ম শিবিরের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ থেকে শুরু করে ভিন রাজ্যের প্রচারকরা বাংলায় এসে বারবার এনআরসি লাগু করার কথা ঘোষণা করে গিয়েছেন। নির্বাচন পরবর্তী পর্যায়ে এনআরসি লাগু করার দাবিকে সামনে এনে কখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, আবার কখনও দিলীপ ঘোষ কড়া ভাষায় হুমকি দিয়ে চলেছেন। এরকম একটা পরিস্থিতিতে জোড়াফুল শিবিরের তরফে এনআরসি বিরোধিতায় রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু করা হলেও, এই ইস্যুতে মমতার পথে নামাটা রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন উত্তর কলকাতা তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে সিঁথির মোড় থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত বি টি রোড়ের সাড়ে চার কিলোমিটারেরও বেশি অংশ জুড়ে মিছিল করেন দল সুপ্রিমো। বিকেল তিনটের কিছু আগে সিঁথি থেকে যখন মিছিল শুরু করেন মমতা, পিছনে আছড়ে পড়ছিল জনস্রোত। সাউথ সিঁথি, রবীন্দ্রভারতী, শীলস গার্ডেন, চিড়িয়ামোড় হয়ে মিছিল যতই শ্যামবাজারের দিকে এগিয়েছে, ততই বেড়েছে মানুষের ভিড়। রাস্তার দু’পাশেও ছিল সমান উন্মাদনা আর উচ্ছ্বাস। দু’পাশে ঠাসা ভিড়ে দাঁড়ানো মানুষ কোথাও ফুল ছিটিয়ে, কোথাও শাঁখ বাজিয়ে আবার কোথাও সাদা পায়রা উড়িয়ে বরণ করেছে মমতাকে। গোটা রাস্তায় তৃণমূল সুপ্রিমোর সঙ্গে পা মিলিয়েছেন লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও মন্ত্রিসভার সহকর্মী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাপস রায়, শশী পাঁজা প্রমুখ।
শ্যামবাজারের সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রশ্ন, ছোট শিশু কাচের শিশি ভাঙলে বকাবকি করা হয়। কিন্তু যে বুড়ো খোকারা এনআরসি’র নামে দেশভাগ করতে উদ্যত হয়েছে, তাদের শাস্তি কী? উত্তরও দিয়েছেন নিজেই। বলেছেন, আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই এর জবাব দেওয়া হবে। বাংলায় এনআরসি করার চেষ্টা হলে, অবস্থান কী হবে, জনতাকে তার নিদানও দিয়েছেন তিনি। মমতার আহ্বান, যে যেখানে যেভাবে থাকবেন, বেরিয়ে পড়বেন। হাতের কাছে যা থাকবে, তা নিয়েই নামবেন। স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরে প্রমাণ করতে হবে নাগরিক কি না? মানব না কিছুতেই। এ রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্ব শুধু টাকা আর কেন্দ্রীয় এজেন্সিতে। ধিক্কার জানাই বিজেপিকে।