পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় শারদোৎসব। সেই পুজোর মূল ঋত্বিক পুরোহিতরা। দিনে দিনে পুজোর বাজেট বেড়েছে হু হু করে। থিমের চল আসার পর পুজো প্যান্ডেল কখনও কখনও হয়ে উঠেছে আস্ত আর্ট গ্যালারি। ধর্ম-ভক্তির বেড়া ডিঙিয়ে পুজোর উত্তরণ ঘটেছে উৎসবে। তাতে কোনও আপত্তি নেই পুরোহিতদের। তবে উৎসবের জৌলুস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুজোর সঠিক পদ্ধতির সঙ্গে কেন আপস করা হবে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বছরের পর বছর ধরে শারদোৎসবের আগে এই সময়টায় টানা কয়েকদিন কর্মশালা করে দুর্গাপুজোর সঠিক পদ্ধতি ও কৃৎকৌশলের প্রশিক্ষণ দেয় সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা অ্যাকাডেমি। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারীর পরিচালনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে তাঁদের মতামত জানা গেল।
নিজে পুজো না করলেও পুজোর আচার-বিচার-পদ্ধতিতে খুব আগ্রহ বোধ করেন হাওড়ার কদমতলার বাসিন্দা, পেশায় সেলস ট্যাক্সের পদস্থ কর্মী রুমা দেবনাথ। তাঁর বাড়িতে বাসন্তী পুজো হয়। তিনি বলেন, পুজো করতে গেলে নিষ্ঠা খুব জরুরি। আসলে আমরা বেশিরভাগই সংস্কৃত মন্ত্রগুলির অর্থ বুঝি না, কোনও কাজ কেন করা হয়, সেটা মানুষ যত বেশি জানবেন, ততই পুজোয় নিষ্ঠা, নিয়মকানুন মেনে চলার প্রবণতা বাড়বে। কিন্তু এখন এসবে মানুষের আগ্রহ কম। তাই গুরুত্ব হারিয়েছে। কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। পুজো করতে হলে তার নিয়মকানুন, আচার-বিচার মেনেই করা ভালো।
এবারই প্রথম বাড়ির পুজো করবেন তরুণ সম্ব্রত কুশারী। ডাক্তারির ছাত্র সম্ব্রত বলেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে যেমন নিয়মকানুন জরুরি, তেমনই পুজোর ক্ষেত্রেও। আমরা রসায়নের পরীক্ষাগারে না জেনে যদি একটি পদার্থের সঙ্গে যে কোনও পদার্থ মিশিয়ে ফেলি, তাহলে কাঙ্খিত ফলাফল তো আসবেই না, উল্টে নানা বিপত্তি হতে পারে। ঠিক তেমন পুজোর নিয়মকানুন না জেনে পুজো করলে তার কোনও অর্থ থাকে না। হাওড়ার শিবপুরের সমরকুমার চক্রবর্তী, মধ্যমগ্রামের ত্রিদিব ভট্টাচার্যরা কেউ ২৫ বছর, কেউ ৩০ বছর ধরে দুর্গাপুজো করে আসছেন। তাঁরা বলেন, পুজো কমিটিগুলির উচিত পুরোহিতদের যোগ্যতা খতিয়ে দেখে নেওয়া। পরিপাটি করে পুজো হচ্ছে, কিন্তু অদক্ষ পুরোহিত—এরকম ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুজোতে যত আড়ম্বর যোগ হচ্ছে, ততই গুরুত্ব হারাচ্ছে পুজোর মূল বিষয়টি। এটা একেবারেই কাঙ্খিত নয়।
কথা হচ্ছিল এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জয়ন্তবাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, কলকাতার কথা ধরলে, বারোয়ারি পুজোগুলিতে নিয়মকানুন, নিষ্ঠা একটু কম। তবে বাড়ির পুজোগুলিতে সব কিছু মেনে চলা হয়। বারোয়ারি পুজোতেও নিষ্ঠা মানার একটা চেষ্টা থাকে। আসলে অনেক পুরোহিত সঠিকভাবে জানেন না দুর্গাপুজোর পদ্ধতি। এটা রপ্ত করতে হয়। কেউ এসব তো শিখে আসে না। ফলে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি পুজোর উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করব, আপনারা পুজোর দিকেও খেয়াল রাখুন। তাঁর কর্মশালায় গিয়ে দেখা গেল, জনা পঞ্চাশেক নবীন-প্রবীণ মানুষ জড়ো হয়ে শিখে নিচ্ছেন মহাস্নান বা হোমের পদ্ধতি, কীভাবে কলাবউ সাজাতে হবে, কীভাবে সন্ধিপুজো করতে হবে ইত্যাদি নানা কৃৎকৌশল। তাঁরা অনেকেই বলছেন, পুজোর মন্ত্রের মধ্যে যে অর্থ, যে ভাব রয়েছে, তা বোধগম্য না হলে পুজো বিফলে যাবে। পুজোয় বিশ্বাসী সবার এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।