গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
যাঁরা খাদ্যরসিক, তাঁরা বোঝেন, রসগোল্লার যে ডেলিকেসি, তা যেমন তেমন করে তৈরি হওয়ার নয়। চিনির মোটা রসে চোবানো হাল্কা হলদেটে রঙের গোলাকার মিষ্টি হলেই রসগোল্লা হল না। তাতে যদি কোনওভাবে স্টার্চ বা সুজি মিশে ওজনদার হয়ে যায়, তাহলে তো স্বাদের বারোটা বেজে গেল। রসগোল্লা হবে শুধুই ছানার। সেখানে কোনও ভেজাল চলবে না। হাল্কা রসে ডুবে থাকা তুলতুলে নরম রসগোল্লা হবে একেবারে মেদহীন, নিটোল, স্মার্ট। জিভে পড়লে ‘স্বর্গীয়’ অনুভূতি হবে। কিন্তু স্বাদ ও বাহারে ভরা এমন রসগোল্লা চাইলেই কি মিলবে?
প্রায় দু’বছর হতে চলল জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা ‘জিআই’ তকমা পেয়েছে ‘বাংলার রসগোল্লা’। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জিআই তকমা নিতে রাজি হয়নি প্রায় কোনও সংস্থা। সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে একমাত্র কে সি দাশকে। রসগোল্লাই যে বাংলা থেকে একমাত্র জিআই পেয়েছে, তা নয়। পশ্চিমবঙ্গের বহু পণ্যেই জিআই আছে। কিন্তু সে সবের থেকে রসগোল্লার লড়াই ছিল একেবারে আলাদা। রসগোল্লা তাদের, এমন দাবিদার হয়ে উঠেছিল প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা। তাদের দাবি ছিল, যে মিষ্টি স্বয়ং জগন্নাথদেবকে নিবেদন করার প্রথা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ কী করে দাবি করে, রসগোল্লার উৎপত্তি বাংলায়? বিষয়টি গড়ায় আইনি লড়াই পর্যন্ত। বিস্তর টালবাহানার পর অবশেষে রসগোল্লা নিয়ে জয় হয় এরাজ্যের। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়, রসগোল্লার জন্ম বাংলাতেই। নবীনচন্দ্র দাশের আবিষ্কারকেই স্বীকৃতি দেয় তারা। ওড়িশা অবশ্য হাল ছাড়েনি। তাদের যে মিষ্টি নিয়ে এত গরিমা ছিল, তাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্র। অবশ্য তাকে রসগোল্লা বলা হয়নি। সেই মিষ্টির নাম ‘ওড়িশার রসগোলা’।
রাজ্য সরকারের ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড হর্টিকালচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ওই জিআই বিতরণ করার দাবিদার। তাদের বক্তব্য, চাইলেই তারা যাকে তাকে সেই জিআই লোগো বিলোতে পারে না। সেক্ষেত্রে রসগোল্লার সংজ্ঞা মেনে মিষ্টি প্রস্তুত করতে হবে সংশ্লিষ্ট দোকানকে। কী কী উপকরণে এবং কী শর্তে সেই রসগোল্লা তৈরি হবে, তার মাপকাঠি আছে। যারা তা করবে, তাদের রসগোল্লা পরীক্ষা করা হবে স্টেট ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে। সংশ্লিষ্ট মিষ্টান্ন বিক্রেতাকে আবেদন করতে হবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে সেই টেস্ট রিপোর্ট সহ আবেদন পাঠানোর প্রশাসনিক কাজটি করবে। গোটা প্রক্রিয়াটি শেষ করতে পাঁচ থেকে ছ’মাস লাগে বলে জানিয়েছেন রাজ্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের কর্তারা।
এবার রাজ্য সরকারের ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড হর্টিকালচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের কর্তারা কোমর বেঁধেছেন জেলায় জেলায় রসগোল্লাকে জিআই তকমা দিতে। ইতিমধ্যেই তাঁরা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা নিজেরাই বিভিন্ন জেলায় ক্যাম্প করে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের থেকে আবেদনপত্র নিচ্ছেন এবং জিআই তকমা পাওয়ার কাজটিতে সাহায্য করছেন। কর্পোরেশনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, তাঁরা একাধিক জেলায় ক্যাম্প শুরু করেছেন চলতি সপ্তাহে। এখনও পর্যন্ত ৭৪টি মিষ্টান্ন সংস্থার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় তাঁরা পৌঁছবেন এবং রসগোল্লার মান বাড়িয়ে জিআই পেতে কাউন্সেলিং করবেন। চলতি মাসে টার্গেট রয়েছে সাতশো দোকান। মোট আড়াই হাজার দোকানের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন তাঁরা। ওই কর্তার কথায়, জিআই বড় কথা নয়। সেটি একটি প্রশাসনিক লোগো মাত্র। কিন্তু তার মাধ্যমে স্বাদ ফিরবে রসগোল্লায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।