নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রেল বোর্ডের সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার নামে ৪০ লক্ষ টাকার জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে দক্ষিণ কলকাতার বিজেপির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করল সরশুনা থানার পুলিস। মঙ্গলবার রাতে ওই নেতাকে পাটুলির বাড়ি থেকে ঘুম থেকে তুলে থানায় নিয়ে এসে জেরা করা হয়। বুধবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম বাবান ঘোষ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ কলকাতার ওই প্রভাবশালী বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে সরশুনা থানায় গত জানুয়ারি মাসে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন বেহালা শকুন্তলা পার্কের বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক যুবক। অভিযোগের প্রায় সাড়ে সাত মাস পর ওই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হল। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। ধৃতকে বুধবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। আদালতে বাবান ঘোষ দাবি করেন, আইনের পথে লড়াই হবে। এত পুরনো ঘটনায় কেন আমাকে গ্রেপ্তার করা হল, আমি জানি না। তিনি বর্তমানে বিজেপি জনতা মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি। এছাড়াও টলিউডে বিজেপি সংগঠনের সভাপতি। এদিন বাবানকে আদালতে তোলার সময় বিক্ষোভ দেখান বিজেপি জনতা মজদুর ট্রেড ইউনিয়নের শ’পাঁচেক কর্মী। তাঁরা পুলিসের গাড়ি ঘিরে স্লোগান শুরু করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। যদিও পুলিসি তৎপরতায় পরিস্থিতি বড় আকার নেয়নি। এদিকে, তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই এফআইআরে মুকুল রায়েরও নাম আছে। এদিন এব্যাপারে মুকুলবাবুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তঁাকে পাওয়া যায়নি। তবে তঁার আইনজীবী শুভাশিস দাসগুপ্ত বলেন, রেলওয়ের স্পেশাল ইকোনমিক জোনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য ৭০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগকারীর দাবি। ২০১৫ সালে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, সেই সূত্রে এখন পুলিস সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মুকুল রায় সেই ঘটনার জেরে বুধবার হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছেন। আশা করছি, সোমবার মামলাটির শুনানি হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, তৃণমূল কাটমানি খাচ্ছে। আর বিজেপি কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শাসকদল বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে হার মানছে। সেকারণেই মিথ্যা মামলায় বিজেপি কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। দল আইনি পথে লড়াই করবে।
অভিযোগকারী সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ২০১৫ সালে নিজাম প্যালেসে মুকুল রায় তাঁর সঙ্গে বাবানের পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর রেল বোর্ডের সদস্যপদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য দফায় দফায় ৪০ লক্ষ টাকা বাবান তাঁর কাছ থেকে নেন। তিনি দিল্লিতেও গিয়েছিলেন। এমনকী, তৎকালীন রেলমন্ত্রীর আপ্ত সহায়কের সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও তাঁকে সদস্য করা হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে হুমকি দেন বাবান। এরপরই তিনি পুলিসের দ্বারস্থ হন।