কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
খোলাবাজারের তুলনায় সরকার বেশি দামে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয় একশ্রেণীর ফড়ে। তারা চাষিদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে তা বেনামে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে বেশি দামে বিক্রি করে। এটা বেশ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মরশুমে মোটা ধানের সরকারি ক্রয়মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১৫৫০ থেকে ১৫৭০ টাকা। যেখানে খোলাবাজারে দাম ১৪০০-১৫০০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। ফড়েরা চাষিদের বাড়ি গিয়ে খোলাবাজারের থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারের কাছে বিক্রি করলে মোটা টাকা মুনাফা হয়। এবার ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে নতুন আমন ধান ওঠার পর সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলিতে ফড়েদের ব্যাপক তৎপরতার অভিযোগ ওঠে। পুলিস জেলায় জেলায় বিশেষ অভিযানে নামে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার এবং ধান আটক করা হলেও ফড়েদের যে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, তা স্বীকার করছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা।
এবার তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ফড়েদের আটকাতে চাইছে খাদ্য দপ্তর। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেওয়ার জন্য চাষিদের জমির খতিয়ান সহ বিভিন্ন নথিপত্র পেশ করতে হয়। চাষির নাম, ঠিকানা, জমির বিবরণ সব কিছুই কৃষি দপ্তরের তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে। ওই তথ্যভাণ্ডার খাদ্য দপ্তর নিয়ে নিজেদের পোর্টালে আপলোড করে নেবে। সব সরকারি স্থায়ী ও অস্থায়ী ধান ক্রয়কেন্দ্রে ইন্টারনেট সহ কম্পিউটার থাকে। কোনও চাষি ধান বিক্রি করতে এলেই ওই তথ্যভাণ্ডার থেকে তাঁর নাম-ঠিকানা বের করে তিনি কত পরিমাণ ধান বিক্রি করলেন, সেটা নথিভুক্ত করে নেওয়া হবে।
প্রান্তিক ও ছোট চাষিরা যাতে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন, সেটাই সরকারের মূল লক্ষ্য। এই কারণে ধান বিক্রির ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। চলতি বছরেই সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৯০ কুইন্টাল। কোনও বড় চাষি ৯০ কুইন্টালের বেশি ধান একাধিক কেন্দ্রে বিক্রি করলে তা ধরার কোনও সুযোগ এতদিন ছিল না। এবার কৃষকবন্ধুর তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করায় সেই সুযোগ আর মিলবে না। এতে আরও বেশি ছোট ও প্রান্তিক চাষি সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ পাবেন বলে খাদ্য দপ্তরের কর্তারা আশা করছেন।
ফড়েরা চাষিদের নাম ব্যবহার করে সরকারি কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে ধান বিক্রি করেন। নতুন ব্যবস্থায় এটাও আটকানো যাবে। খাদ্য দপ্তরের কাছে খবর আছে, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগসাজশ করে জমির ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে চাষির নামে ধান বিক্রিও করা হয়। এর পিছনে ‘কাটমানির’ খেলা থাকে। কিন্তু কৃষকবন্ধুর তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করলে কোনও ভুয়ো চাষির নাম ব্যবহার করে ধান বিক্রি করতে এলে তা চিহ্নিত হয়ে যাবে। কারণ জমির মালিকানার কাগজপত্র খতিয়ে দেখে তবেই কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করে কৃষি দপ্তর। কিন্তু কোনও চাষি যদি কৃষকবন্ধু প্রকল্পের জন্য নাম না নথিভুক্ত করেন, সেক্ষেত্রে কী হবে? খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে চাষিরা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে আসেন, তাঁরা সবাই কৃষকবন্ধুর সুবিধা নেবেন বলে আশা করা যায়। ধান বিক্রি করতে আসা চাষির নাম কৃষকবন্ধুর তালিকায় না থাকলে খতিয়ে দেখার অন্য ব্যবস্থাও থাকবে। কৃষকবন্ধুর অস্ত্র দিয়ে ফড়েদের আটকানোর ব্যাপারে আশাবাদী মন্ত্রী।