পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
কাঠফাটা রোদ্দুরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জ্বলছিল কলকাতা ও শহরতলি। একই চিত্র ছিল দক্ষিণের একাধিক জেলায়। বেলা বাড়তে যেভাবে মেঘ করে এল, তাতে বর্ষা নয়, অনেকেই চৈত্র শেষের বা বৈশাখের কালবৈশাখীর আঁচ পেলেন। যেভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় কেঁপে উঠল চারদিক, তাতে বর্ষার চিরন্তন রূপ খুঁজে পেলেন না অনেকেই। কেন অসময়ে এমন কালবৈশাখীর রূপ নিল বর্ষা?
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের কথায়, এবার জুলাই মাসে যে রূপ দেখালো প্রকৃতি, তার সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতের মিল নেই। সোমবার শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এত তাপ গত ১৫ বছরের জুলাইয়ের হিসেব খুঁজলে পাওয়া মুশকিল। মঙ্গলবারও ৩৭.২ ডিগ্রি ছিল কলকাতার তাপমাত্রা। এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচ ডিগ্রি পারদ বেশি চড়ে থাকা মোটেই সহজ কথা নয়। দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলাতেই তাপমাত্রা ছিল বেশ চড়া। এদিকে বাতাসে ততটা আর্দ্রতা ছিল না। পূর্ব দিক থেকে বাতাস বইছে না এখন। পশ্চিমী বায়ুর দাপাদাপি দক্ষিণবঙ্গে। সঙ্গে ছিল নিম্নচাপ অক্ষরেখার উপস্থিতি। এই সার্বিক পরিস্থিতিতে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তা বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করে এবং ঝড়ের পরিস্থিতি তৈরি করে। সেই কারণেই যতটা বৃষ্টি হয়েছে, তার তুলনায় বাজ পড়েছে বেশি। হাওয়া ছুটেছে শনশনিয়ে। যদি পুবালি হাওয়া বইত এই সময়, তাহলে নিম্নচাপ অক্ষরেখা প্রবল বৃষ্টি নামাত দক্ষিণবঙ্গে, জানিয়েছেন অধিকর্তা। তাঁর কথায়, উত্তরবঙ্গ থেকে নিম্নচাপ অক্ষরেখা সম্পূর্ণভাবে নীচে নেমে এসেছে। ফলে আপাতত হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতিতে যদি কোনও ঘূর্ণাবর্ত বা ওই জাতীয় কোনও সমীকরণ তৈরি হয়, তাহলে দক্ষিণের জেলাগুলিতে ভালো বর্ষা শুরু হবে, জানিয়েছেন অধিকর্তা। সেই পরিস্থিতির সম্ভাবনা কি তৈরি হয়েছে? তাঁর কথায়, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। যদি হয়, সেই খুশির খবর আমরা আগেই দিয়ে দেব।
এদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থানার অন্তর্গত হোমরা পলতা হাইস্কুলের দু’ছাত্রের শরীরে বাজ পড়ায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। টিফিন টাইমে নবম শ্রেণীর তিন ছাত্র স্কুলের বাইরে বেরলে, তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তাদের মধ্যে সুজাউদ্দিন মোল্লা (১৫) নামে একজনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আনিসুর রহমান লস্কর (১৫) নামে অপর ছাত্রকে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে তার মৃত্যু হয়। জখম আমিনুল হালদার ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। অন্যদিকে, হাওড়ার শ্যামপুরের বানেশ্বরপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের বোড়াল গ্রামে মাছ ধরার সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে নারায়ণ বাজানি (২৪) নামে এক যুবকের।
অল্প সময়ের ঝোড়ো হাওয়ায় শহরে গাছ ভেঙে পড়ে। পার্ক স্ট্রিট ও ক্যামাক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে, এজেসি বোস রোড এবং ডিএল খান রোডের সংযোগস্থলে, বেনিয়াপুকুরে পদ্মপুকুর মোড়ের কাছে, স্ট্র্যান্ড রোডে, শরৎ বসু রোড এবং বসন্ত রায় রোডের সংযোগস্থলে গাছ ভেঙে পড়ে। তাতে যেমন যান চলাচল ব্যাহত হয়, তেমনই বহু জায়গায় জল জমেও ট্রাফিক সমস্যা তৈরি হয়। দুপুরে সাময়িকভাবে জল জমে যায় লালবাজার স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, থিয়েটার রোড, পার্ক স্ট্রিট, এজেসি বোস রোড, হসপিটাল রোড, আমির আলি অ্যাভিনিউ, লাউডন স্ট্রিট, রডন স্ট্রিট, চক্রবেড়িয়া রোড, সত্য ডক্টর রোড, থিয়েটার রোড, বেকার রোড, বেলভিডিয়ার রোড, হরিশ মুখার্জি রোড, এলগিন রোড, হাইড রোড সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায়। জল অবশ্য বেশিরভাগ জায়গাতেই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।