বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজ্যে সাংগঠনিক শক্তির বিচারে তৃণমূলের ধারেকাছে পৌঁছতে না পারলেও শাসক বিরোধী ভোটের সিংহভাগ এককাট্টা করতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। তার সঙ্গে ধর্মীয় বিভাজনের উস্কানি দিয়ে সামাজিক স্তরেও মেরুকরণ ঘটিয়েছিল। তারই সুবাদে রাজ্যে ১৮ আসন দখলে সমর্থ হয়েছে বিজেপি। দুটি আসন কংগ্রেস পেলেও বামেদের ভাঁড়ার শূন্য হয়েছে। দেখা গিয়েছে, মূলত অ-বিজেপি বিরোধী শক্তির ক্ষয় থেকেই ঝুলি ভরিয়েছে বিজেপি। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে আটটি আসনে বাম প্রার্থী ভোট কেটে তৃণমূলের জয়ের রাস্তা খুলে দিয়েছে। অর্থাৎ বামেরাই বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলের সহায় হয়েছে। এই পর্যালোচনার পাশাপাশি দফায় দফায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা এবং নিজের পেশাদার টিমকে দিয়ে সরেজমিনে কেন্দ্র ধরে ধরে সমীক্ষা চালিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। তাঁর সেই সমীক্ষাতেই রাজ্যে বিরোধী শূন্যতার ভয়ঙ্কর পরিণতি প্রকট হয়েছে।
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেই বিরোধী সাফ করার ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। সেই লক্ষ্যেই পঞ্চায়েতে রেকর্ড সংখ্যাক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফয়সলা যেমন হয়েছে, তেমনই পুলিস-প্রশাসনের ভরসায় নিকেশ হয়েছে বিরোধীরা। এর আগেই ২০১১ সালে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই কংগ্রেস ও বাম দলগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দলে টানতে শুরু করে তৃণমূল। সেই সময় থেকেই বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, পুলিস-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে জোড়া ফুলের পতাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অর্থবল ও পেশিবলের অভিযোগও তুলেছেন বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতারা। এবার ফলাফল পর্যলোচনা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অবিজেপি বিরোধী শিবির যত দুর্বল হয়েছে, ততই শক্তি পেয়েছে গেরুয়া বাহিনী। দলের অন্দরে বাম ও কংগ্রেস ভাঙানোর এই যে আগ্রাসী মনোভাব তৈরি হয়েছিল, সেটাই শেষ পর্যন্ত কাল হল। গত সপ্তাহে তৃণমূল জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর ঠারেঠোরে সে কথাটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বৈঠকে হাজির এক জেলা সভাপতি বলেন, রাজ্যে বাম সরকার দীর্ঘদিন টিকে থাকার নেপথ্যে বিরোধী ভোট বিভাজনের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বহুদলীয় ব্যবস্থার সেই সুযোগ নিতে এবার তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন বলেই মনে করেন ওই বিধায়ক তথা জেলা সভাপতি। তাঁর দাবি, বিরোধী না থাকলে নিজের প্রকৃত শক্তি পরখ করা যায় না। সেই কথাটাই পিকে তাঁদের মনে করিয়ে দিয়েছেন বলে জানান ওই জেলা সভাপতি।
প্রশান্তের টোটকায় কি বদল ঘটেছে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর আচরণে? এখন সেটাই চর্চা তৃণমূলে। বিধানসভার সদ্য শেষ হওয়া অধিবেশনে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে একাধিকবার নানা বিষয়ে সাক্ষাৎ হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। বিরোধীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধীদের ডাকা হয়না। অথচ এবার অধিবেশন চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের সমস্যা নিয়ে বৈঠকে শাসকের পাশাপাশি বিরোধী দলের প্রতিনিধিদেরও ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, বিজেপির পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা, যিনি নিজেও তফসিলি জাতিভুক্ত, তাঁর মতও শুনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নামাঙ্কিত গবেষণা কেন্দ্রের জন্য নিউটাউনে জমির অনুমোদন আটকে ছিল। অতি সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং সেই জট ছাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দলের পুর প্রতিনিধি থেকে বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে মমতা সংগঠনকে প্রশাসন নির্ভরতা মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মেনেই দলের অভ্যন্তরে বদলের উদ্যোগ নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।