বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
লিলুয়ায় ধৃতদের নাম শ্যামল সরকার ওরফে টিঙ্কাই ও অমিত রায় ওরফে বাপ্পা। পুলিস জানিয়েছে, রাজুপ্রসাদ চৌরাসিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তারা কিছুদিন আগে ১৩ লক্ষ টাকা নেয়। ফের তারা তাঁর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তারা তাঁর ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেয়। কিন্তু, তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকায় ওই ব্যবসায়ী এতদিন থানায় অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোলাবাজি ও কাটমানি নিয়ে সরব হওয়ায় তিনি বুকে বল পান। এই নিয়ে রবিবার রাতে এলাকায় গোলমালও হয়। কিন্তু, তিনি ওই রাতে অভিযোগ জানাননি। এরপর সোমবার বিকালে তিনি লিলুয়া থানায় অভিযোগ জানান। ওই রাতেই পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের তিনদিনের পুলিস হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিস জানিয়েছে, এই তোলাবাজি চক্রে আর কে কে আছে তা ধৃতদের জেরা করে জানা হবে।
এদিকে, ঠিকাদারির কাজে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূল কংগ্রেসের সুনীল বিশ্বাসকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হিলির বাসিন্দা ঠিকাদার জয়ন্ত সরকারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ওই তৃণমূল নেতা সুনীল বিশ্বাস দু’লক্ষ টাকা চান। কমিশন না দিলে কাজ করতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। অবশেষে ঠিকাদার মঙ্গলবার পুলিসের কাজে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে এদিনই পুলিস তাঁকে গ্রেপ্তার করে ৪০৯ ধারায় মামলা দায়ের করে। ধৃতকে বালুরঘাট আদালতে তোলা হলে ছয় দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
অন্যদিকে, পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই দু’জন লিলুয়া এলাকায় তোলাবাজি চালাচ্ছিল। তা নিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ছিল। কিন্তু, তাদের মাথায় তৃণমূল নেতাদের বরহস্ত থাকায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছিলেন না। যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি (সদর) অরূপ রায় বলেন, প্রকৃত তৃণমূল কর্মীরা তোলাবাজি করে না। কিছু লোক দলের নাম করে তোলাবাজি বা কাটমানি খেয়ে আমাদের বদনাম করছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিস কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কোনওভাবেই এই তোলাবাজদের দল মদত দেবে না। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকা দে বলেন, অভিযুক্তরা কয়েকজন তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘুরলেও তারা তৃণমূল করত না। পুলিস আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের এক নেতার মদতেই তারা দিনের পর দিন এলাকায় তোলাবাজি চালাত। এক সময় হাওয়াই চপ্পল পরে ঘুরে বেড়ালেও সম্প্রতি তারা গলায় মোটা সোনার চেন পরে ঘুরত। এমনকী, তাদের জীবনযাত্রার মানও অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রথমে তারা ১৩ লক্ষ টাকা নেয়। এরপর ফের পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। রবিবার রাতে এই নিয়ে ওই এলাকায় গোলমাল হয়। ওই দুই তৃণমূল কর্মীর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা স্থানীয় লোকজন ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু, পরে স্থানীয়স্তরে বিষয়টি মিটে যায়। কেউ থানায় অভিযোগ জানায়নি। এরপর সোমবার বিকালে ওই ব্যবসায়ী থানায় অভিযোগ জানান। এরপরই পুলিস ওই দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে, এই ঘটনায় যথেষ্ট বিব্রত তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে প্রতিটি ব্লক এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে, কোনও রকম তোলাবাজি বা কাটমানিতে কেউ অভিযুক্ত হলে দল তার পাশে দাঁড়াবে না। এমনকী, পুলিসকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৃণমূল পুলিসের কাছে আবেদন জানাবে।