বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এদিন বিধানসভায় কাটমানি ইস্যুতে শোরগোল শুরু হয় প্রথমার্ধে প্রশ্নোত্তর পর্বের পর। কংগ্রেসের হুইপ মনোজ চক্রবর্তী এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা সরকারের বিবৃতির দাবিতে পয়েন্ট অফ অর্ডার তোলার চেষ্টা করেন। একই দাবি জানান বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও। কিন্তু অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দাবি নাকচ করা মাত্রই বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের সদস্যরা রে রে করে ওঠেন। কাটমানি নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান লেখা পোস্টার বের করে হইচই আরম্ভ করে দেন তাঁরা। প্রথমে নিজেদের নির্দিষ্ট আসনে দাঁড়িয়ে চিৎকার জুড়লেও পরে তাঁরা ওয়েলে নেমে অধ্যক্ষের চেয়ারের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। আগের তুলনায় সংখ্যা বাড়লেও বিজেপির বিধায়করা তখন কিন্তু কী ভূমিকা নেবেন, তা নিয়ে একে-অপরের দিকে মুখ চাওয়া-চায়ি করছিলেন। পরিষদীয় দলনেতা মনোজ টিগ্গা ও ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন সিং আসন ছেড়ে ওয়েলে নামলেও তাঁরা চুপচাপই ছিলেন। তবে বিক্ষোভের কারণে বিধানসভার নিরাপত্তাকর্মীরা অধ্যক্ষের চারপাশে পজিশন নিলেও সদনে উপস্থিত শাসক শিবিরের মন্ত্রী-বিধায়করা কেউ পাল্টা হইচইয়ে যাননি সেই সময়।
অধ্যক্ষ অবশ্য প্রবল হট্টগোলের মধ্যে উল্লেখপর্ব চালিয়ে যান। বিক্ষোভ চললেও এই পর্বে সরকারপক্ষের পাশাপাশি কয়েকজন বাম বিধায়ক তাঁদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তারই মধ্যে অবশ্য কৌশল করে সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য কাটমানি ইস্যুতে রবিবার জারি করা বিবৃতির প্রসঙ্গে তৃণমূল মহাসচিব তথা পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন। কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখানোর পর বাম-কংগ্রেস বিধায়করা স্লোগান দিতে দিতে ওয়াকআউট করেন সদন থেকে। বাইরে বেরিয়ে তাঁরা গলার স্বর দ্বিগুণ চড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। বারাসত কোর্টে নিজের মামলার কারণে সকালে অনুপস্থিত থাকলেও সেখানে তখন যোগ দেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। মিনিট কয়েক পর ফের সদনে ঢুকে দুই বিরোধী শিবিরের বিধায়করা সরাসরি ওয়েলে চলে যান স্লোগান দিতে দিতে। এই সময় কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় পবিত্র ন্যায়দণ্ড বা মেজটি ধরে ওল্টানোর চেষ্টা করলে নিরাপত্তারক্ষীরা তাতে বাধা দেন। এরপরই অধিবেশনের বিরতি ঘোষণা করে সদন ছেড়ে চলে যান অধ্যক্ষ। দ্বিতীয়ার্ধে রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে কাটমানি ইস্যু নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়ে প্রসঙ্গ উত্থাপন করার চেষ্টা করেন মান্নান। অধ্যক্ষ তাতে সম্মত হননি। তবে রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিতর্কে অংশ নিতে গিয়ে শাসক ও বিরোধী উভয় শিবিরের বিধায়কদের বক্তব্যে উঠে আসে কাটমানি প্রসঙ্গ। বিরোধীরা সবুজসাথী, গীতাঞ্জলি, বাংলার বাড়ি সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া বাবদ শাসক দলের নেতা-কর্মীদের কাটমানি খাওয়ার কথা তুলে ধরেন ফলাও করে। খণ্ডন করতে গিয়ে তৃণমূলের বিধায়করা বাম আমলেও কাটমানির প্রচলন ছিল বলে পাল্টা কটাক্ষ করেন।
মান্নান-সুজন পরে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিদ্ধার্থ রায় ওয়াংচু কমিশন করেছিলেন। তাতে দু’জন মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরতের নিদান দিলেও কারা এই অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত, সে সম্পর্কে কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না। আমরা চাই, উনি এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করুন। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।