গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ফলে পাঁচদিনে পড়লেও ডাক্তারদের ধর্মঘট মেটার নামগন্ধ নেই। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দিন আনি দিন খাই মানুষদের সরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ভোগান্তি এখন চরমে উঠেছে। রোগী মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতি ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সুলতা বিশ্বাস নামে বসিরহাটের বাসিন্দা এক রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সদ্যোজাত এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মেদিনীপুর মেডিক্যালে উত্তেজনা ছড়ায়। আন্দোলনরত ডাক্তারদের সামনেই শিশুর দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বাড়ির লোকজন। বহরমপুরে নওদাপাড়ায় চাঁদ মিয়ারা বিবি নামে আরও এক রোগীর মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে।
এদিনও বিকেলে ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিশিষ্ট চিকিৎসক মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে ধর্মঘট মেটাতে নবান্নে বৈঠকে বসেন। কিন্তু, আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে সেই বৈঠকে অংশ নেননি। জেনারেল বডির বৈঠক ডেকে প্রেস বিবৃতিতে তাঁরা জানান, বিকেল পাঁচটায় নবান্নের বৈঠকে যাবেন না তাঁরা। সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত তাঁদের জন্য অপেক্ষা করেন মমতা। তারপর মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিনহা, পুলিস কমিশনার অনুজ শর্মা, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে দাবিগুলি ওঁরা করেছেন, অধিকাংশই মানা হয়েছে। পাঁচজনকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিজে ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ওঁরা কথা বলেননি। সেই অসম্মানও গায়ে মাখছি না। আমি পিজিতে যাওয়ার পর ওঁরা চিৎকার-চেঁচামিচি করেছেন, অসভ্য আচরণ করেছেন। সবই মাপ করে দিয়েছি। বিজেপি শাসিত গুজরাত, রাজস্থান সহ আট-ন’টি রাজ্যে এসমা জারি হলেও, আমি কিন্তু করিনি। কিন্তু, কতদিন ধৈর্য ধরব? গরিব মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। বাচ্চারা মারা যাচ্ছে। আমরা বিনামূল্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা চালু করেছিলাম। সেটাই এখন বন্ধ। এর সমাধান চাই। যদি আমার কাছে ওঁরা আসতে না চান, রাজ্যপালের কাছে যান, মুখ্যসচিবের কাছে যান। রাজ্যপালের সঙ্গে কথাও হয়েছে। সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, জানিয়েছি। উনি সন্তুষ্ট। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তার দায়িত্ব একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারের হাতে থাকবে। জুনিয়র ডাক্তারদের বহিরাগত বলেননি বলেও জানান মমতা।
একদিকে যখন সরকারি তরফের শীর্ষস্তরে এই তৎপরতা চলছে, অন্যদিকে কল্যাণী জে এন এম, চুঁচুড়া ইমামবাড়া, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে বেশকিছু চিকিৎসক এদিনও ইস্তফা দিয়েছেন। মমতা জানিয়েছেন, এইভাবে ইস্তফা দেওয়া যায় না।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যোগ দেওয়ার ডাক খারিজ করে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা শুক্রবার রাতেই। এমন পরিস্থিতিতে বরফ গলাতে শনিবার সকালে এনআরএসে আসেন আইএমএ’র সর্বভারতীয় সভাপতি ডাঃ শান্তনু সেন। ধর্মঘটীদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও লাভ হয়নি। উল্টে শান্তনুবাবু এই আন্দোলনে ‘বহিরাগত’ এবং সিপিএমের ডাক্তার সংগঠনের ‘সিনিয়র মাথা’রা আছেন জানানোয় ডাক্তাররা আরও চটেন। এনআরএস-কাণ্ডে আহত জুনিয়র ডাক্তার পরিবহকে দেখতে এদিন মল্লিকবাজারের বেসরকারি হাসপাতালে যান অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বাস্থ্য) রাজীব সিনহা এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। জুনিয়র ডাক্তাররা বৈঠকে যাবেন না, ততক্ষণে তা জেনে বিকেলে শেষ চেষ্টা করতে ফের এনআরএসে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ প্রদীপ মিত্র। কোনও লাভ হয়নি। সবমিলিয়ে পাঁচদিন আগে অবস্থা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রইল।