গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
শীর্ষ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের ধর্মঘটী ইনটার্নদের জব্দ করতে আরও ছ’মাসের ইনটার্নশিপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয় সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ-সুপারকে। তাঁরা প্রত্যেকেই বেঁকে বসে শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তাদের জানান, এ ব্যবস্থা নিলে স্বাস্থ্যভবন নিক। তাঁরা এমন অপ্রিয় কাজ করতে পারবেন না। দরকারে গণইস্তফা দেবেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ প্রদীপ মিত্র বুঝিয়ে প্রশাসকদের শান্ত করলেও এদিন সরকারি ডাক্তারদের গণইস্তফা আটকাতে পারেননি।
রাত পর্যন্ত পিজি’র ১৭৮ জন, এনআরএস-এর ১০৮ জন, আরজিকর-এর ১২৬ জন, কলকাতা মেডিক্যালের ২৮ জন, বর্ধমানের ৩৬ জন, মুর্শিদাবাদের ৩২ জন, মালদহের ২৫ জন ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অসংখ্য চিকিৎসক, বিভাগীয় প্রধান ও সিনিয়র অধ্যাপক সহ ১০০ জনেরও বেশি ডাক্তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা সহ ৩৩ জন এবং পাভলভ হাসপাতালের সাত চিকিৎসকও ইস্তফা দিয়েছেন। দিনভর এই জটিল পরিস্থিতি চলার পর সন্ধ্যায় বিশিষ্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের পাঁচ বিশিষ্ট চিকিৎসক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এর মাঝেই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ প্রদীপ মিত্র এন আর এস-এ ডাক্তারদের ধর্নামঞ্চে যান। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দিয়ে তিনি ধর্মঘটীদের প্রতিনিধিদলকে নবান্নে ডেকে পাঠান। যদিও মুখ্যমন্ত্রীকেই এনআরএস-এর ধর্নামঞ্চে আসতে হবে এবং তাঁর যাবতীয় মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, এই দাবিতে অনড় থাকেন ধর্মঘটীরা। সুকুমারবাবু জানিয়েছেন, আজ শনিবার বিকেল ৫টায় ফের বৈঠক হবে। মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, যেভাবেই হোক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া দরকার। আজ বিকেল পাঁচটায় জুনিয়র ডাক্তারদের ফের সময় দিয়েছেন মমতা। আমরাও থাকব। এই পরিস্থিতিতেই এদিন জখম জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে দেখতে হাসপাতালে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি।
এদিকে, চিকিৎসক নিগ্রহ ইস্যুতে শুক্রবার বিকেলে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাস্তায় নামেন কয়েক হাজার চিকিৎসক। তাঁরা ছাড়াও মিছিলে পা মেলান অপর্ণা সেন, দেবজ্যোতি মিশ্র, রূপম ইসলাম সহ অনেকেই। পাশাপাশি বাংলার চিকিৎসক ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে সর্বভারতীয় আইএমএ’র ‘ধিক্কার দিবস’কে কেন্দ্র করে সরকারি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, হায়দরাবাদ, গোয়া, তামিলনাড়ু সহ বিভিন্ন রাজ্যের চিকিৎসকরা। জাপান সহ অন্যান্য দেশের চিকিৎসকরাও বাংলায় ডাক্তার নিগ্রহের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সোমবার, ১৭ই জুন এই ইস্যুতে সারা দেশে চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সর্বভারতীয় আইএমএ।
এদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিলেও এদিন বিকেল থেকে ফের তাঁরা অবস্থানে বসেন। মেদিনীপুর মেডিক্যালে এদিন আউটডোর আংশিক খোলা ছিল। যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। তবে, পরিষেবা ঠিকমতো না মেলায় অনেক রোগীই এদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। অপরদিকে, জুনিয়রদের বাধায় শুক্রবার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর খোলা যায়নি। ইন্ডোরের পরিষেবাও ব্যাহত হয়। প্রতিবাদে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়রা হাসপাতালের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ৬৭ জন চিকিৎসকের ইস্তফা নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা ইস্তফাপত্র দেননি। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ৫৫ জনের মধ্যে ৫০ জন চিকিৎসকই গণইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির প্রতিবাদে জেলা হাসপাতালের ৫০ জন চিকিৎসক গণইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসক ধর্মঘটের জেরে শুক্রবারও দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’মাসের এক শিশুও আছে। এছাড়া পিজিতেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুরের এক ব্যক্তির বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃতের নাম যদুচন্দ্র দাস (৪৬)।