কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
যে কোনও সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের ইন্ডোরে বড় ডাক্তারবাবুরা সকাল-সন্ধ্যা রাউন্ড দিলেও, পরিষেবার সিংহভাগ কাজই করে থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ইন্টার্ন, হাউসস্টাফ, পিজিটিরা। আর তাঁরাই তো ধর্মঘটে। ওই মেডিক্যাল অফিসারের কথার মর্মার্থ বুঝতে কারওরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তিনি আশঙ্কা করছিলেন, ইন্ডোরে ভর্তি করার পর বিনা চিকিৎসায় আশঙ্কাজনক রোগী মারা গেলেও, কিছু বলার থাকবে না।
তখন বেলা সাড়ে ৩টে। এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে কথা হচ্ছিল শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের এক চিকিৎসকের সঙ্গে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে সহমর্মিতা জানাতে তিনি এসেছিলেন সেখানে। ‘আপনার হাসপাতালে তো গোটা রাজ্য থেকে সাপে কাটা রোগীরা আসেন। কী অবস্থা ইন্ডোরের?’ উত্তর এল, ‘কী আর বলব, যা হোক করে একটা চলছে। হাতে গোনা কয়েকজন মেডিক্যাল অফিসার ঠেকনা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। যে কোনও সময় মারাত্মক কিছু একটা ঘটে যেতেই পারে।’
ঘটনা তিন। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ। ইমার্জেন্সি, ট্রমা সেন্টার সহ সব গেট বন্ধ করে দিয়েছেন ধর্মঘটীরা। ফোন এল হাসপাতাল থেকে। ইন্ডোরের অবস্থা খুব খারাপ। একেই পরিকাঠামোর তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি। তাই ইন্ডোরে রোগীদের পরিষেবা সবসময়ই প্রশ্নের মুখে। ইমার্জেন্সি, আউটডোর তো এখন বন্ধই, রোগীদের দেখা হচ্ছে না। কিন্তু যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁদের কী হবে? মেডিক্যালগুলির ওয়ার্ডগুলিতে ইমার্জেন্সি ছাড়া জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার নেই বললেই চলে। অধিকাংশ ইন্ডোর পরিষেবা নির্ভরশীল জুনিয়র ডাক্তার আর আরএমওদের উপর। জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্মঘটে। আরএমওদের অধিকাংশ সেই ধর্মঘটে সহানুভূতিশীল। তাহলে রোগীদের কী পরিণতি হতে পারে বুঝতে পারছেন? জানালেন ওই উদ্বিগ্ন চিকিৎসক।
বিকেল সাড়ে ৪টে। পিজি’র ইমার্জেন্সি। ইউএসজি করানোর জন্য খোঁজ করতে এসেছিলেন বগুলার স্বর্ণময়ী তালুকদার। বললেন, মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। ভর্তি ইন্ডোরে। ডাক্তাররা বলছেন, সমস্যা রয়েছে। পেটের ‘ফটো’ করতে হবে। কিন্তু, তিনদিন ধরে তো ঘুরেই যাচ্ছি। এরকম চললে আমার মেয়েটার কী হবে?
বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, একদিকে যেমন মুর্শিদাবাদের রোহিত শেখ, রায়গঞ্জের শেখর দাসরা আউটডোরে ডাক্তারবাবুদের দেখাতে না পেয়ে হতাশ হয়ে হাসপাতালকেই ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন, সেখানে নদীয়ার রীনা সরকার, ধনেখালির উত্তম সাঁপুইয়ের মতো অসংখ্য মানুষ উদ্বিগ্ন ইন্ডোরে ভর্তি প্রিয়জনদের নিয়ে। কমবেশি সকলের গলায় এক সুর, ডাক্তারবাবুদের দেখা নেই ওয়ার্ডে। নার্সদিদিদের জিজ্ঞাসা করলে বলছেন, ধর্মঘট চলছে, কেউ আসবেন না।
অনেকেরই আশঙ্কা, গোটা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালেই ইন্ডোরের রোগীদের মৃত্যুহার এই তিনদিনে অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। যাঁরা মারা যাবেন, আপাতদৃষ্টিতে রোগভোগে মারা গেলেও মৃত্যুর আসল কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়তো নজরদারির অভাব!