পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
তবে হাসপাতালের অচলাবস্থার প্রসঙ্গ আসার আগে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে রাজ্যপাল অবশ্য আইনশৃঙ্খলা নিয়েই আলোচনায় জোর দেন। এই ধরনের বৈঠক ডাকার ব্যাপারে তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রথম উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, সেটাও আলোচনার শুরুতে কেশরীনাথ জানিয়ে দেন ওই চার নেতাকে। শাসক দল তৃণমূলের তরফে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের মহম্মদ সেলিম, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র ও বিজেপি’র সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার হাজির ছিলেন তাঁর ডাকা এই বৈঠকে। চার নেতাকে উদ্দেশ্য করেই রাজ্যপাল বলেন, আমি চেয়েছিলাম রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এই ধরনের বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীই ডাকুন। কারণ, তিনি এই ধরনের বৈঠকে হাজির থাকলে তার গুরুত্ব অনেক বেশি হয়। তাছাড়া আমি রাজ্যপাল হলেও প্রশাসনের শীর্ষকর্তা নই। তাই আমি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাগিদ থেকে এই বৈঠক ডেকেছি, যাতে আপনারা সবাই মিলে রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে একযোগে উদ্যোগী হন। কেশরীনাথের কথার উত্তরে অবশ্য পার্থবাবু কিছু বলেননি। তবে সেলিম, সোমেন, জয়প্রকাশরা তাঁকে একসুরে বলেন, এটা সত্যি যে আইনশৃঙ্খলার ইস্যুতে রাজ্যপালকে কেন এই বৈঠক ডাকতে হল, সেটা আমাদেরও প্রশ্ন। তবে ২০১১ সালের আগস্টের পর বাংলায় মুখ্যমন্ত্রীর তরফে আর কোনও সর্বদলীয় বৈঠক হয়নি। কংগ্রেস ও সিপিএমের দুই নেতা অবশ্য বাংলায় নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক সংঘর্ষের জন্য মোদি-মমতার দলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান রাজ্যপালের সামনে।
বৈঠক শেষে তাঁর তরফে জারি করা বিবৃতিতে কেশরীনাথ জানান, বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সামগ্রিকভাবে ছ’টি বিষয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলগুলির নেতৃত্ব সহমত হয়েছে। সেগুলি হল, ১) গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোধ ও অধিকার রক্ষিত হওয়া উচিত এবং সেই কাজে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার যথাযথ প্রয়োগ দরকার। ২) যেভাবেই হোক হিংসা বন্ধ হওয়া উচিত। কারণ, হিংসার ফলে আখেরে সামগ্রিকভাবে রাজ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩) সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি ফেরাতে হবে। ৪) কোনওরকম উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা চলবে না। ৫) রাজ্যে শান্তি ফেরাতে সংবাদমাধ্যমকেও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। ৬) বাংলার গণতান্ত্রিক ও সামাজিক বন্ধন যাতে কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে সবাই একযোগে উদ্যোগী হবে। তবে সূত্রের খবর, শান্তি ফেরাতে দলগুলির তরফে কেউ কোনওভাবে গুন্ডামিতে মদত দেবে না—এমন শব্দ তাঁর বিবৃতিতে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন কেশরীনাথ। কিন্তু এব্যাপারে পার্থবাবু তাঁর দলনেত্রীর সঙ্গে কথা না বলে সবুজ সঙ্কেত দিতে পারবেন না বলে জানানোয় শেষমেশ বিষয়টি নিয়ে আর এগননি রাজ্যপাল। তবে চার নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর পার্থবাবুর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আলাদা করে কথা বলেন তিনি। রাজভবন থেকে বেরিয়ে নবান্নে গিয়ে গোটা বৈঠকের বিষয়ে মমতাকে অবহিত করেন পার্থবাবু। বৈঠক শেষে জয়প্রকাশ বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে রাজ্যপালকে এই ধরনের বৈঠক ডাকতে হচ্ছে। তাঁর এই পদক্ষেপই প্রকৃত অবস্থা বুঝিয়ে দিচ্ছে। সেলিম ও সোমেন বলেন, দিল্লি ও বাংলার দুই শাসক দল নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দিচ্ছে। গ্রাম থেকে হাসপাতাল—সর্বত্রই আজ অরাজকতা চলছে প্রশাসনের ব্যর্থতায়। রাজ্যপালকে এব্যাপারে তাঁর ভূমিকা পালনের দাবি জানিয়েছি।