নিজস্ব প্রতিনিধি, ফরাক্কা: এক মাসও হয়নি, চালচলন, কথাবার্তা আমূল বদলে গেছে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুমন, সামিয়া, নাগমা, সুপ্রীতিদের। তথাকথিত গ্রাম্য বালিকার স্বাভাবিক কুণ্ঠা, জড়সড় ভাব উধাও তাদের মধ্য থেকে। সেই জায়গা দখল করেছে স্বপ্রতিভতা বা ‘স্মার্টনেস’। তাদের জীবনে এই বদলের কারিগর এনটিপিসি, ফরাক্কা। রাষ্ট্রায়ত্ত এই মহারত্ন সংস্থা রাজস্থানের বেয়ার ফুট ইউনিভার্সিটি নামে এক সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শতাধিক ছাত্রীকে নানাভাবে দক্ষ ও সপ্রতিভ করে তুলতে। এই ছাত্রীদের কেউ হয়তো টিভিতে অনুষ্ঠান দেখে নাচত আপনমনে। সে গত একমাসে নাচের প্রশিক্ষক পেয়ে প্রথাগতভাবেই শিখতে পেরেছে কিছুটা। খুঁজে নিয়েছে নাচের মধ্যে আনন্দ। ঝাড়খণ্ডের যে বালিকা একবার শহরে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে কম্পিউটার দেখেছিল, তার ছোট্ট হাত এখন মাউসের ক্লিকে স্বচ্ছন্দ। এই পরিবর্তনে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মা-বাবা ভীষণ খুশি। এক মাসের আবাসিক এই ‘গার্ল এমপাওয়ারমেন্ট মিশন’ (জেম) প্রকল্পে পূর্ণ সময়ের আবাসিক ব্যবস্থাপনায় থাকা ১৩০ জন ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা অনেকেই চাইছেন, এমন ব্যবস্থা যেন চালু থাকে বছরের পর বছর। যেন আরও অনেক ছাত্রী এমনভাবে নিজের সক্ষমতার ক্ষেত্রগুলি চিনতে পেরে ভবিষ্যতে সাফল্য পেতে পারে।
এনটিপিসি’র ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি’ (সিএসআর) প্রকল্পে সারা দেশে প্রথম ধাপে ২০০০ ছাত্রীকে এভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে বলে জানালেন এখানকার অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) মালা ঘোষচৌধুরী। তিনি জানান, মুর্শিদাবাদ থেকে ১৪টি, মালদহ এবং পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড থেকে ছ’টি করে উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচজন করে ছাত্রীকে নিয়ে কর্মসূচি নিয়েছি। ১৯ মে শুরু করেছিলাম। শেষ হবে ১৫ জুন। আমাদের বড় প্রাপ্তি হল, এখানে মেয়েরা আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারছে। অভিভাবক এবং স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষিকাদের অনুরোধ করেছি, এদের এই শিক্ষা যেন তারা অভ্যাসে পরিণত করার সুযোগ পায়। ছাত্রীরা এখানে শিখেছে যোগব্যায়াম, নাচ, গান, আবৃত্তি, ক্যারাটে, চাইল্ড পার্লামেন্টের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাবতীয় নিয়মকানুন সহ আরও অনেক কিছুই। চাইন্ড পার্লামেন্টের নির্বাচিত ‘প্রধানমন্ত্রী’ ছোট্ট শেহেনওয়াজ পারভিন তাই বলছিল, আর ক'দিন পরেই আমাদের সবাইকে যে যার বাড়ি ফিরে যেতে হবে। তাই মন খারাপ করছে খুব।