নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পরপর তিনবার লোকসভা ভোটে জিতলেও পরবর্তীতে নির্বাচনী ময়দান থেকে সরে দাঁড়াতে চান সৌগত রায়। দমদম কেন্দ্র থেকে লোকসভায় জেতা তৃণমূলের এই সাংসদ দলীয় কর্মীদের সংবর্ধনার জবাবে বয়সজনিত কারণে আর ভোটে লড়াই করতে চান না বলে ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। কেন্দ্রে বিকল্প শক্তি হয়ে ওঠার পথে বিরোধীদের ব্যর্থতাকেই নরেন্দ্র মোদির জয়ের কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন এই বর্ষীয়ান সাংসদ। এই বিপর্যয় কাটাতে দলীয় কর্মীদের আচার-আচরণ থেকে জীবনযাত্রা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সুবক্তা ও তার্কিক হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। দলের মঞ্চই হোক অথবা সংসদের অধিবেশন— বাংলায় বা ইংরেজিতে তাঁর বক্তব্য পেশের দক্ষতা বিরোধীদেরও তারিফ পেয়েছে। বুধবার পানিহাটিতে দলীয় সংবর্ধনায় নিজেই তাঁর অবসরের ইচ্ছার কথা বলেন। দলের দুর্দিনেও তাঁকে দমদম থেকে জেতাতে পানিহাটির মানুষ যে সমর্থন জানিয়েছেন, তাতে তিনি কৃতজ্ঞ। সৌগতবাবু বলেন, ২০০৯ সালে প্রথমবার মাত্র ২০ হাজার ভোটে তিনি দমদম কেন্দ্রে জিতেছিলেন। সেই সময় পানিহাটি বিধানসভা কেন্দ্র একাই ১৫ হাজার ভোটে তাঁকে এগিয়ে দিয়েছিল। তাই ওই বিধানসভার নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে তাঁর বিশেষ কৃতজ্ঞতা রয়েছে বলে অকপটে স্বীকার করেছেন সৌগতবাবু। তৃতীয় দফায় জেতার পর তাঁর দায়িত্ব অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেও, পরবর্তী লোকসভা ভোটে আর লড়াইয়ের ইচ্ছে তাঁর নেই। সৌগতবাবু বলেন, আগামী লোকসভা ভোটে তাঁর বয়স ৭৭ পার হয়ে যাবে। এই বয়সে তাঁর পক্ষে আর ভোটের লড়াইয়ে থাকা সম্ভব হবে না। স্বেচ্ছায় তাঁর সংসদীয় জীবনে ইতি টানতে চান তিনি। যদিও বিরোধী আসনে থাকতে হবে, তবুও দমদমবাসীর জন্য যথাসাধ্য উন্নয়নের কাজ তিনি করবেন বলেই জানিয়েছেন।
এবারের লোকসভা ভোটে বিরোধীরা একজোট হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য গড়ার চেষ্টা হয়েছিল। সরাসরি সেই প্রসঙ্গ না তুলেও সৌগতবাবুর দাবি, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা মোদির বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। তাই ইচ্ছা না থাকলেও মোদিকে সমর্থনে বাধ্য হয়েছে মানুষ। এছাড়া কেন্দ্রের বিজেপি সরকার পাঁচ বছরে কোনও কাজ না করলেও ভোটের মুখে দেশপ্রেম ও ধর্মীয় মেরুকরণকে অস্ত্র করে প্রচারে নেমেছিল। এই প্রচারের মোকাবিলায় বিরোধীদের ব্যর্থতা মোদিকে জিততে মদত করেছে বলেই মনে করেন সৌগতবাবু। জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি রাজ্যের পরিসরে তৃণমূলের সাংগঠনিক বিষয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। সৌগতবাবু মনে করেন, জনসংযোগে খামতি ও কর্মীদের আচার-আচরণ অনেকাংশে ভোটারদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। উল্লেখ্য, ভোটের আগেও সৌগতবাবু দলের কর্মিসভায় এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। ওই সংবর্ধনা সভাতেও একই সুরে ফের কর্মীদের উদ্দেশে, মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবহার সংশোধিত করার পরামর্শ দেন দমদমের সাংসদ।