বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
লোকসভা ভোটের ফলেই স্পষ্ট, বাম শিবিরের এক বিরাট অংশের ভোট পশ্চিমবঙ্গে সংসদীয় রাজনীতিতে বিজেপি’র উত্থানের অন্যতম কারণ। কেন বাম সমর্থকরা ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মফুলের বোতাম টিপলেন, তার কিছু কারণও প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট করেছেন বাম নেতৃত্ব। বাম শিবিরের অভিভাবক দল সিপিএমের নেতারা এব্যাপারে প্রথমেই যে বিষয়টি উল্লেখ করছেন তা হল, তৃণমূলকে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার ইস্যু। সামগ্রিক সন্ত্রাস থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণের মতো নানা কারণে রাজ্যের শাসকদলের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ বাম সমর্থকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ‘টাইট’ দিতে নরেন্দ্র মোদির দলের উপরই ভরসা রেখেছেন। একইসঙ্গে বাম সমর্থকরা মনে করেছেন, শাসক তৃণমূলকে তাদের ‘ভাষা’য় মোকাবিলা করতে বর্তমান সিপিএম নেতৃত্ব কোনওমতোই সক্ষম হবে না। কারণ, এই মুহূর্তে সেই দম বা দক্ষতা কোনওটাই তাদের নেই। সর্বোপরি, নরেন্দ্র মোদির সরকার দিল্লির মসনদে থাকলে তৃণমূলকে সমানে সমানে টক্কর দেওয়ার সুযোগ ও সাহস মিলবে বলেও লালপার্টির সমর্থকরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছেন। এসবের মিলিত ফলস্বরূপ আজ বাম সমর্থনের ঝুলি ক্রমশ শূন্যের দিকে এগচ্ছে— এটা এখন আলিমুদ্দিনের অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করছেন।
বাংলা থেকে সংসদে শূন্য প্রতিনিধির নজির, লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা ৪০টি আসনের মধ্যে একমাত্র যাদবপুরে জমানত বাঁচানো এবং সাকুল্যে ৭ শতাংশ ভোট পাওয়ার ছবি নিঃসন্দেহে সিপিএম নেতাদের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে। সে কথা বৃহস্পতিবার ফল প্রকাশের পর ঠারেঠোরে মেনেও নিয়েছেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, এই ফল স্বীকার করেও বলছি, এমন বেনজির শক্তিক্ষয় আগে কখনও দেখিনি। গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাও যে মেরুকরণের চরম সীমায় পৌঁছেছে, সেটা এই ফলে স্পষ্ট। আসলে মেরুকরণ যখন হয়, তখন মানুষ দল বা মতের বাইরে বেরিয়ে কোনও একটি পক্ষকে সমর্থন করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। গোটা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশ থেকে বিজেপি এবং বাংলা থেকে তৃণমূলকে হটানোর যে স্লোগান তাঁরা দিয়েছিলেন সেটা ব্যর্থ হয়েছে কি না, তা এখনও স্বীকার করতে চাননি সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, আমাদের আন্দোলন কর্মসূচির খামতি, সাংগঠনিক দুর্বলতা বা রণকৌশলের ত্রুটির মতো বিষয়গুলির মধ্যে কোনটি বা কোনগুলি এই ভরাডুবির কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এখনও চিহ্নিত করা হয়নি। ফল নিয়ে বিশদ পর্যালোচনার পরই এনিয়ে মন্তব্য করা যাবে। বিপর্যয় স্বীকার করার সঙ্গে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক এদিন অবশ্য বলেন, রাজনৈতিক মেরুকরণ যেন কোনওভাবে সাম্প্রদায়িক চেহারা না নেয়, সেজন্য সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন- সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। রাজ্যের শান্তিরক্ষার জন্য এটা জরুরি। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের এব্যাপারে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে মানুষের পাশে থাকতে হবে।