সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারের মিছিল, মিটিং হয়েছে একলক্ষেরও বেশি। যা অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। মিছিল, মিটিং অনুমোদনের জন্য এবার সুবিধা অ্যাপ চালু করেছিল নির্বাচন কমিশন। সভা-মিছিলের ৪৮ ঘণ্টা আগে ওই অ্যাপে আবেদন করে অনুমোদন করাতে হয়। ১১ মার্চ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সভা-মিছিলের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজারের কিছু বেশি। তার মধ্যে পথসভার সংখ্যা হল ৪৯,৬৮৪। মিছিলের জন্য আবেদন জমা পড়ে ২৪,৮৭৭টি। বড় সভার জন্য আবেদন জমা পড়েছিল ৫৫৯৭টি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, রাজ্যে হেলিকপ্টার নামার জন্য কমিশন অনুমোদন দিয়েছে ৩৮০টি। যা অন্যান্যবারের তুলনায় অনেক বেশি।
কমিশন সূত্রেই জানা গিয়েছে, সভা-মিছিলের জন্য অন্য রাজ্যে সর্বাধিক আবেদন জমা পড়েছিল ৪০ হাজারের কাছাকাছি। পশ্চিমবঙ্গে তার চেয়ে অনেক বেশি আবেদন পড়েছে। তা অনুমোদিতও হয়েছে। সুবিধা অ্যাপে অনুমোদন ছাড়া এবার কোনও সভা-মিছিল করা যাবে না বলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য রাজ্যে এত সংখ্যক সভা-মিছিলের আবেদন পড়েনি। পশ্চিমবঙ্গ বাদে সব থেকে বেশি সভা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। মিছিল-মিটিংয়ে অন্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। অবশ্য বাংলার রাজনীতিতে মিছিল-মিটিংয়ের বরাবরই আলাদা মাত্রা আছে। স্বাধীনতার আমল থেকেই তা চলছে বলে অভিজ্ঞমহলের মত।
তবে রাজ্যের মিটিং-মিছিলে তমলুক লোকসভা কেন্দ্র সব থেকে এগিয়ে ছিল। সেখানে ৫৮৮৭টি মিটিং-মিছিলের আবেদন অনুমোদিত হয়। আর সবথেকে কম হয়েছে মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে। মাত্র ৩৯৮টি। এরপরের স্থান মালদহ উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে। সেখানে হয়েছে ৪৬৭টি। জেলার হিসেবে সব থেকে বেশি মিটিং-মিছিল হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়। সুবিধা অ্যাপে ওই জেলার জন্য ৯২০৩টি আবেদনের অনুমোদন করা হয়েছে। তার পরে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। সেখানে অনুমোদনের সংখ্যা হল ৭৭৮৯টি। সব থেকে কম অনুমোদন হয়েছে কালিম্পং জেলায়। সেখানে মাত্র ১৩০টি সভা-মিছিলের অনুমোদন হয়। এরপরেই রয়েছে দার্জিলিং জেলা। সেখানে আবেদন পড়েছিল ৯৫৮টি। সবকটিই অনুমোদন করেছে কমিশন।
রাজনৈতিক দলের ভিত্তিতে সব থেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। তার পরে রয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। হেলিকপ্টারে ল্যান্ডিংয়ে তৃণমূলকে পিছনে ফেলেছে বিজেপি। এবার কেন্দ্রীয় বিজেপির বিশেষ নজর ছিল পশ্চিমবঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৮টি সভা করেছেন। এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রী এত সভা করেননি। বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তার থেকে কম সভা করেছেন। রোড শো করেছেন একটি। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, বিজেপি’র মুখপাত্র শাহনওয়াজ খান প্রমুখ একাধিক সভা করেন। কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী রাজ্যে সভা করেছেন তিনটি। তবে হার মানতে রাজি নন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি একাই ৯০টি সভা করেছেন। গাড়িতে নয়, পায়ে হেঁটে ১৬টি রোড শো করেছেন। এই প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে ১৫০ কিমি পদযাত্রা করেছেন।