বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
শুক্রবার ছিল বিশ্ব হাইপারটেনশন দিবস। থিম ছিল ‘নো ইউর নাম্বার’। যার মর্মার্থ হল, নিজের প্রেসার জানুন। এই উপলক্ষে সল্টলেকে স্বাস্থ্য দপ্তরের হেডকোয়াটার্স স্বাস্থ্যভবনের সমস্ত কর্মী-আধিকারিকদের প্রেসার মাপার আয়োজন করা হয়। সবাইকে পাওয়া যায়নি। অনেকে আবার নীচে নামতেও চাননি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত চলে রক্তচাপ মাপার কাজ। দপ্তরের নন কমিউনিকেশন ডিজিজ শাখা আয়োজিত এই শিবিরে হিসেব শেষে যা জানা গেল, তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগার। শিবিরে আসা ২২১ জন অফিসার-কর্মীর মধ্যে ৬৪ জনেরই সিস্টোলিক-ডায়াস্টলিক হিসেব অনুযায়ী প্রেসার ১৪০/৯০-এর বেশি। আরও উল্লেখযোগ্য হল, এঁদের অনেকেই নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ খান। কার্ডিওলজিস্টরা জানাচ্ছেন, হাইপারটেনশন মাপার এই হিসেব (১৪০/৯০) পুরনো। কার্ডিওলজিস্টদের একাধিক আন্তর্জাতিক সংগঠনের নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী, এখন ১৩০/৮০ এমএমএইচজি’র বেশি প্রেসারকে উচ্চ রক্তচাপ বলে ধরা হয়। যদিও দপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ শাখার উপ স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং প্রেসার মাপা অভিযানের দায়িত্বে থাকা ডাঃ গোপাল বিশ্বাস বলেন, আমরা ১৪০/৯০-কে হাই প্রেসারের সূচক ধরেই মেপেছি। সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত কিছু বলব না। রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
২৮ শতাংশেরও বেশি কর্মী-অফিসারের হাই প্রেসার ধরা পড়লেও এই রিপোর্টে স্বস্তি একটাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরের মূল ‘মাথা’ যাঁরা, সেই অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বাস্থ্য) ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা)’র প্রেসার অবশ্য নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই।
দপ্তর সূত্রে খবর, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব রাজীব সিনহার ব্লাড প্রেসার একেবারেই স্বাভাবিক। তাঁর সিস্টোলিক ও ডায়াস্টলিক প্রেসার হল ১২৪/৭০। রাজীববাবুর পালস রেট বা নাড়ির গতিও স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যেই। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডাঃ প্রদীপ মিত্রের প্রেসার ১৩০/৭৬। এটিও স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যেই। তবে তাঁর নাড়ির গতি বেশি—৮৮। চাপের মধ্যে সিংহভাগ সময়ে মেজাজ ধরে রাখার জন্য বিখ্যাত প্রদীপবাবু বলেন, আমি ঠান্ডাই থাকি। তবে নানা কারণে বছর কয়েক আগে একটু প্রেসার ধরা পড়ায় হাল্কা একটা প্রেসারের ওষুধ খাই। নিজের অতিরিক্ত পালস রেট নিয়ে প্রদীপবাবুর সাফাই—ওটা বরাবরই বেশি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তীও ঠান্ডা মাথার মানুষ বলে পরিচিত। নিয়মিত ওষুধ খেয়ে তাঁর প্রেসারও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে (১৪০/৭৮)। পালস রেট ৭০।
পিজি হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্স-এর প্রাক্তন অধিকর্তা এবং বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ অরূপ দাশ বিশ্বাস বলেন, জনসংখ্যা অনুপাতে প্রেসারের রোগীর সংখ্যা ধরলে স্বাস্থ্যভবনের পরিসংখ্যান ঠিকই আছে। ১৩০/৮০ মাত্রাকে স্বাভাবিক ধরে এগলে এখন প্রতি ১০০ জনে ৩০ জনেরই হাই ব্লাড প্রেসার। আগে এই হিসেব ছিল ১৪০/৯০। এখন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সিস্টোলিক সর্বোচ্চ ১৩০ এবং সর্বনিম্ন ১২০ রাখার দিকে আমরা জোর দিই। নিচেরটা ডায়াস্টলিক সর্বোচ্চ ৮০ এবং সর্বনিম্ন ৭০ রাখতে বলি। তবে বয়স ৬৫’র বেশি হলে সেটা ১৪০/৯০ হতে পারে। আর বয়স ৮০ ছাড়ালে ১৬০/৯০। হার্টের অসুখ না থাকলে নাড়ির গতি বা পালস রেট ৬০ থেকে ৮০’র মধ্যে রাখা যায়। হার্টের অসুখ থাকলে তা ৬০ থেকে ৭০-এর মধ্যে রাখলে ভালো।
কার্ডিওলজিস্টরা বলছেন, সুগারের মতোও ব্লাড প্রেসারও এখন ঘরে ঘরে সমস্যা। হাই প্রেসার বা হাইপারটেশনশন থেকে স্ট্রোক, চোখের অসুখ, হার্টের সমস্যা, কিডনির অসুখ, পায়ের নার্ভের অসুখ সহ হাজার একটা সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং দিনে খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে খুব বেশি হলে এক চা চামচের বেশি নুন ব্যবহার করা উচিত নয়। এদিন বিশ্ব হাইপারটেনশন দিবস উপলক্ষে নায়েগ্রা জলপ্রপাতকে বিভিন্ন রঙে সাজিয়ে তোলা হয় এদিন।