বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
রোড শো শুরুর সময় থেকেই তেতে ছিল বিজেপি সমর্থকরা। লেনিন সরণীতে সরকারি ভবন থেকে কেন বিজেপির ঝান্ডা এবং ফ্লেক্স খোলা হচ্ছে, এই প্রশ্নে ক্ষোভে ফেটে পড়ে রোড শোয়ে আসা সমর্থকরা। কেউ কেউ ফ্লেক্স খুলতে আসা নির্বাচন কমিশনের গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরও চালায়। দফায় দফায় বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি সমর্থকেরা। কলেজ স্ট্রিটে যখন মিছিল আসে, তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল সমর্থক ছাত্রছাত্রীদের বিজেপি সমর্থকরা এলোপাথারি মারধর করে বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, সেখানে তাদের সমর্থকদের লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করা হয়েছিল। তারই পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে। যদিও, টিএমসিপির রাজ্য সহ-সভাপতি মণিশঙ্কর মণ্ডলের দাবি, তিনি ৬০-৭০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখাচ্ছিলেন। প্ল্যাকার্ড নিয়ে গো-ব্যাক ধ্বনিও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু সবই চলছিল শান্তিপূর্ণভাবে। হঠাৎই কয়েক হাজার বিজেপি সমর্থক তাঁদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করা হয়। ছাত্রীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। মণিশঙ্কর নিজেও বুকে লাথি খেয়েছেন। পরিস্থিতি রীতিমতো তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের মধ্যে ইটবৃষ্টি, লাঠি, বাঁশ নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা ব্যারিকেড ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। পুলিস বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বিজেপি কর্মীরা বাঁশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলিংয়ে মারতে থাকে। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিস বাহিনী গিয়েও দু’পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। এরপরই শুরু হয়ে যায় পুলিসের লাঠিচার্জ। দু’পক্ষকেই লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে পুলিস। গোটা কলেজ স্ট্রিট চত্বর রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
এরপরেই মিছিলটি আসে বিধান সরণীতে বিদ্যাসাগর কলেজের নতুন বিল্ডিংয়ের সামনে। বিজেপির অভিযোগ, ওই বিল্ডিংটির ছাদ থেকে টিএমসিপি সমর্থকরা তাঁদের দিকে মদের বোতল, ইট এবং হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই নির্বিচারে ছুঁড়েছে। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ জানানো হয়েছে। পাল্টা ইঠ ও বোতল ছোঁড়ায় কলেজের ভিতরে থাকা বেশ কয়েকজন পড়ুয়া গুরুতর জখম হন। তাঁদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এমতাবস্থায় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় বিজেপি সমর্থকেরা। ভিড় থাকায় সেখানে দমকলও পৌঁছতে পারেনি। পুলিসই বালতি এবং মগে করে জল দিয়ে সেগুলি নেভানোর চেষ্টা করে। এদিকে, ভয়ে কলেজের ভিতরেই আটকে পড়েন অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেন। পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে তাঁদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসে। ঘটনার খবর পেয়ে কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুণ্ডু ছুটে এলেও কিছু বলতে চাননি। রেহাই পায়নি গেটের পাশে থাকা বিদ্যাসাগরের মূর্তিও। ভেঙে চুরমার করা হয় সেটিকে। কলেজের ভিতরে তুমুল ভাঙচুর চলে। আসবাব পত্র, কাচের সামগ্রী ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মূলধারার রাজনীতির বলি হতে অনেকদিনই দেখা যায়নি। এদিন এই খবর আসতেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিদ্যাসাগর কলেজে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্থবাবু সেখানে গিয়ে বলেন, বাংলার শিক্ষাকে ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তিকেও ওরা রেয়াত করেনি। ছাত্রসমাজ এবং রাজ্যবাসী এর জবাব দেবে।