বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
এ ব্যাপারে দিলীপবাবু ফোনে বলেন, এই মুহূর্তে গৌতম আমার আপ্ত সহায়ক পদে নেই। মাঝের সময়ে ও নিজে ব্যাবসা করবে বলে চলে গিয়েছিল। পরে আবার ফিরে আসে। ও কাছ থেকে কিসের টাকা পাওয়া গিয়েছে, তা আমি বলতে পারব না। গোটা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জেনেছি।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগেও গৌতমবাবুকে বিজেপির রাজ্য সভাপতির সঙ্গে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। এমনকী বিজেপির পার্টি অফিসেও তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। তিনি দিলীপবাবুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে আসানসোল স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ওভারব্রিজের উপর ওই দু’জন ঘোরাঘুরি করছিলেন। তাঁদের সন্দেহজনকভাবে ঘুরতে দেখে জিআরপি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাঁদের মধ্যে একজনের হাতে থাকা ব্যাগ থেকে পুলিস এক কোটি টাকা উদ্ধার করে। প্রথমদিকে ওই দুই ব্যক্তি টাকার উৎস নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথা বললেও পরে তাঁরা সবকিছু স্বীকার করে নেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দেশ মতো দিল্লির ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে গৌতমবাবুর কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পুলিসের অনুমান, দিল্লির ওই ব্যক্তি একা আসেননি। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, প্রথমদিকে ধৃতদের কথার মধ্যে অসঙ্গতি ছিল। পরে তাঁরা সব স্বীকার করেছেন। তাঁদের কাছ থেকে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গিয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদেরও জেরা করা হতে পারে। এক কোটি টাকার মধ্যে দু’হাজার ও ৫০০ টাকার নোট ছিল।
আসানসোল ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিআর চন্দ্রকুমার মিশ্র বলেন, টাকা সহ ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে আরপিএফও সহযোগিতা করেছিল। পুলিস কমিশনার লক্ষ্মী নারায়ণ মিনা বলেন, জিআরপি কেস করেছে। ওরাই তদন্ত করছে। হাওড়ার এসআরপি নীলাদ্রি চক্রবর্তী বলেন, এই বিষয়ে এখনই কিছু বলব না।
প্রসঙ্গত, এবছর ভোটের শুরু থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগ করে আসছিলেন। বিজেপি বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা ঢোকাচ্ছে বলে তিনি দাবি করছিলেন। আসানসোল স্টেশন থেকে টাকা উদ্ধারের পর সেই দাবির সত্যতা মিলেছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। এর আগে ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছিল। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার টাকার ব্যাগ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়েছে। আসানসোলের মেয়র তথা তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, আমাদের নেত্রী যে অভিযোগ করে আসছিলেন, তা সত্য প্রমাণ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) গৌতমকে তাঁর সহায়ক হিসেবে পাঠায়। উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের বাসিন্দা গৌতম ছোট বয়স থেকেই আরএসএস-এর সক্রিয় কর্মী। এরপর ২০১৬ সালে খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দিলীপবাবু জয়ী হওয়ার পর সরকারিভাবে আপ্ত সহায়কের পদ পান গৌতম চট্টোপাধ্যায়। এরপর দলীয় সভাপতি এবং বিধায়ক হিসেবে কাজের ব্যাপ্তি বাড়তে শুরু করে দিলীপবাবুর। তখন উত্তরবঙ্গ থেকে আর একজনকে দিলীপ ঘোষের আপ্ত সহায়ক করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই দুই আপ্ত সহায়কের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্যের জেরে মনমালিন্য তৈরি হয়। দু’জনে আলাদা জায়গায় থাকতে শুরু করে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে কেবল তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব গৌতমের হাতে ছেড়ে দেন দিলীপবাবু। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সপ্তাহের কিছুদিন খড়গপুর কিছুদিন কলকাতার এমএমএ হোস্টেলে কাটাতেন অভিযুক্ত এই গৌতম। দিলীপ ঘোষের বিধায়ক তলবিলের টাকা খরচ, এমএলএ’র বেতন তোলা, বিধানসভা এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ সবই গৌতমের দায়িত্ব ছিল। সূত্রের দাবি, শেষের দিকে গৌতমের ব্যবহারিক জীবন ও আনুসাঙ্গিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ে দিলীপবাবুও ঘনিষ্ঠ মহলে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। সঙ্ঘের এক শীর্ষ নেতার হস্তক্ষেপে ভোটের আগে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।