গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
প্রশ্ন: অফুরন্ত প্রাণশক্তি। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছুটে যাচ্ছেন। একের পর এক সভা। পদযাত্রা আর রোড শো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও ক্লান্ত হন না। এর রহস্যটা কী?
মমতা: রহস্য আবার কী! এভাবেই তো চলছি বছরের পর বছর ধরে। মানুষের সঙ্গে থাকলে সবসময় উজ্জীবিত হই। মানুষই আমার প্রাণশক্তি, প্রাণের স্পন্দন। যত পরিশ্রমই করি না কেন, মানুষের হাসিমুখ দেখলেই চাঙ্গা হয়ে যাই। যতদিন বাঁচব, মানুষের জন্য কাজ করে যাব। যেদিন মানুষ চাইবে না, তাড়াতে হবে না, নিজেই চলে যাব।
প্রশ্ন: আমাদের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। কিন্তু এই নির্বাচনে গেরুয়া শিবির নানাভাবে মেরুকরণের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগও উঠেছে। উল্টোদিকে ভোটপ্রচারে এসে মোদি-শাহ জুটি একদিকে অভিযোগ করছেন, এরাজ্যে পুজো করতে দেওয়া হয় না এবং পাশাপাশি আপনি বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে তোষণ করে চলেন। এর মোকাবিলা করছেন কী ভাবে?
মমতা: এরা কেন্দ্রে সরকার গড়বে বলে ভোট চাইছে। দেশের সংবিধানই শেষ কথা। অথচ সেই সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোটের জন্য সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলা হচ্ছে, চলছে মেরুকরণ। হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের জন্য বিজেপিকে ভোট দিন—এরকম প্রচারও চালানো হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। ঘৃণা, বিদ্বেষ আর ভাইয়ের সঙ্গে ভাইকে লড়ানোর উস্কানি দিয়ে ভোট চাওয়া! ভয়ঙ্কর এই দল... বিজেপিই শুধু পারে এটা। বারবার এই একই কথা বলেছি। কী বলব বলুন তো! এখানে নাকি দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো কিছুই করতে দেওয়া হয় না। হোমওয়ার্কটুকুও করে আসে না এরা। বাংলার ঐতিহ্য দুর্গাপুজো। সরস্বতী আর লক্ষ্মীপুজো এখানে প্রতি ঘরে হয়। শুধু হিন্দুদের পুজো কেন, বাংলায় প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব একে অপরের সঙ্গে মিলে পালন করা হয়। ঈদ, বড়দিন, গুরু নানকের জন্মদিন, ছটপুজো, কালীপুজো, আর দেওয়ালি বাংলার সবার উৎসব। আর তোষণের যে অভিযোগ? যাঁরা এসব বলছেন, তাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও রয়েছেন। প্রত্যেকেই সংবিধানের নামে শপথ নিয়েছেন। সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং দ্বেষ এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ করব না বলে শপথও নিয়েছেন। অথচ তাঁরাই ভোটপ্রচারে ভাগাভাগির কথা বলছেন, উৎখাতের কথা বলছেন, সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। একটু দম নিয়ে ফের বললেন মমতা, এখানে পুজো করতে দেওয়া হয় না, এহেন প্রচার বাংলার আত্মসম্মানকে আঘাত করেছে। তাই দেখবেন, প্রতিটি নির্বাচনী সভায় আর যে কথাই বলি না কেন, বাংলার মা-বোন, ভাইদের কাছ থেকে জানতে চাইছি, এখানে পুজো নির্বিঘ্নে হয় কি না। এ প্রশ্ন করা মাত্রই সমস্বরে সভাস্থল থেকে জবাব মিলেছে, এসব মিথ্যা প্রচার, এখানে পুজো ঘরে ঘরে হয়। জবাব তো বাংলার মানুষই দিচ্ছেন, আমি আর কী বলব! আর তোষণ! কীসের তোষণ! এখানে হিন্দু-মুসলমান সবার জন্য কাজ করছে মা-মাটি-মানুষ। এখানে উন্নয়নটাই সরকারের অভিমুখ। কোনও ভাগাভাগি আর মেরুকরণ নয়। তাছাড়া একটা চেয়ারে বসে কাজ করি। সেখানে সবাইকে নিয়েই চলতে হয়। এটাই তো সংবিধানের নির্দেশ। যতদিন আছি, এটাই মেনে চলব।
প্রশ্ন: আপনার অভিযোগ, বিজেপি এই নির্বাচনে রাজ্যে টাকার থলি নিয়ে নেমেছে। এই অভিযোগ কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মমতা: কোটি কোটি টাকা খরচ করছে এরাজ্যের ভোটে। আমরা যখন থেকে রাজনীতি করি, টিউশন করে পয়সা বাঁচিয়ে কালি কিনে পোস্টার লিখেছি, পোস্টার সেঁটেছি। আর বিজেপি, এদের দলের কেউ পোস্টার লাগায় না, দেওয়াল লেখে না। সব ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির হাতে। মোটা টাকার বিনিময়ে তারাই পোস্টার লাগাচ্ছে, গ্রামগঞ্জে পতাকা টাঙাচ্ছে, মিটিংয়ে লোক নিয়ে আসছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এমনকী অসম থেকেও লোক এনে ভরানো হচ্ছে মিটিং। আসানসোলে সভা, লোক আনছে পুরুলিয়া আর ঝাড়খণ্ড থেকে। দিল্লি-মুম্বইয়ের এরকম ১৫-১৬টা এজেন্সিকে কয়েকশো কোটি টাকায় নিয়োগ করা হয়েছে। অন্য রাজ্য থেকে নেতাদের এনে কলকাতার হোটেলে বসিয়ে রেখেছে বিজেপি। আর ওদের মিটিংয়ে গেলেই টাকা, মিছিলে হাঁটলে টাকা, স্লোগান দিলে টাকা। প্রধানমন্ত্রীর সভাগুলো দেখেছেন? কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে এক একটা মিটিংয়ে। কোথা থেকে আসছে এত টাকা? এ টাকার উৎস কী? কেন জানতে চাইবে না নির্বাচন কমিশন আর আয়কর দপ্তর? মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন প্রধানমন্ত্রীর বারাণসীর রোড শো দেখেছেন! কত টাকা খরচ হয়েছে? কেন এসবের তদন্ত হবে না? ইউপিএ সরকারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এই টাকার উৎস নিয়ে তদন্ত দাবি করেছেন, আমি তাঁকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। অন্য পার্টির ক্ষেত্রে এরকম ব্যবস্থা, বিজেপির ক্ষেত্রে অন্য খাতির হবে কেন? ওরা কি লাটসাহেবের দল!
প্রশ্ন: নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অমিত শাহের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে দাবি করছে বিরোধীরা। আপনার প্রতিক্রিয়া?
মমতা: নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠলেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এই দাবি তো আমাদেরও। সেই দাবি মান্যতা পেয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে। নির্বাচন কমিশনকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে। জানি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা রয়েছে, সেটা আরও বাড়ানো হোক, তাতে কোনও অসুবিধা নেই। তবে অন্যদের মতো তিনিও তো ভোটের প্রার্থী! নির্বাচন কমিশনের নিয়মকানুন তো তাঁর উপরও প্রযোজ্য! কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে কই? নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন, আমরাও করছি। হেলিপ্যাডে দেখছি, নির্বাচন কমিশনের চিত্রগ্রাহকরা থাকছেন, ছবি তুলছেন। সেটাই নিয়ম। কিন্তু মোদি যেখানে নামছেন, সেখানে সংবাদমাধ্যমের চিত্রগ্রাহক তো ছেড়ে দিন, নির্বাচন কমিশনের ক্যামেরাম্যানকেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে কী! হচ্ছে না। সবার উপর চলছে নজরদারি। অথচ ওঁনার হেলিকপ্টারের ‘বাক্স রহস্য’ ভেদ করতে গিয়ে সাসপেন্ড হতে হল এক আইএএস অফিসারকে। হেলিকপ্টার থেকে বাক্স নামল, অথচ কেউ জানতে পারল না তাতে কী ছিল!
প্রশ্ন: এই নির্বাচনে মোদি-শাহ সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এরাজ্যে ঘনঘন আসতে শুরু করেছেন, বাড়তি সময় দিচ্ছেন। কিন্তু কেন?
মমতা: নাম বলছি না, আমায় বিজেপির এক শীর্ষ নেতা ফোন করে বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আপনি কিছু বলবেন না। কেন বলব না? আমি শুনিনি। ফ্যাসিস্ত কায়দায়, তুঘলকি আচরণে দেশ চলছে, প্রতিবাদ করব না! অবশ্যই করব। নিজের জীবন বাজি রাখতে রাজি, তবুও বিজেপির কাছে মাথা নত করব না। সবাই ভয়ে চুপ করে আছে, কিন্তু আমি চুপ করব না। ওরা (বিজেপি) সেটা জানে। তাই ঘনঘন বাংলায় আসছে, যদি মমতাকে থামানো যায়। হবে না, লড়াই চলবে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত। এই লড়াইটা করি বলেই বাংলার উপর এত রাগ, হিংসা। দু’-একটা গদ্দার হয়তো বুঝিয়েছে, বাংলায় যান, মমতার গলা স্তব্ধ করুন, এতে লাভ হবে। কোনও লাভ হবে না। বাংলা পাবে? ছাই পাবে! অত সোজা নয়। এ কি ছেলের হাতে মোয়া নাকি! কেড়ে নেওয়া যাবে। গোটা দেশে বাজে অবস্থা, লোক কথা শুনছে না। কয়েকটা পেটোয়া টিভি চ্যানেল আর গ্যাস দিয়ে ফোলাতে পারছে না। টিআরপি কমছে। ওরা (বিজেপি) ভাবছে, এটা বোধহয় ত্রিপুরা, সহজেই আত্মসমপর্ণ করবে। মনে রাখা উচিত, এটা বাংলা। এই মাটি দুর্জয় ঘাঁটি, দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে লড়াই করার মাটি। যত আসবে ওরা, যত মিথ্যা বলবে, ততই বাংলার মানুষ জবাব দেবে। এখানে এসে বলছে, রাজ্যে নাকি কোনও উন্নয়নই হয়নি... এমনকী আমি নাকি রেলমন্ত্রী থাকাকালীনও কোনও কাজ করিনি। বলুন তো, এসব শুনলে হাসি পায় না! আমি এসব নিয়ে কিছু বলব না, মানুষই জবাব দেবে। ভাবছে সেন্ট্রাল ফোর্স আর দিল্লি থেকে অবসরপ্রাপ্ত অফিসার এনে সমান্তরাল প্রশাসন চালিয়ে বাংলায় পা জমাবে। কেন তোমাদের কথা শুনবে মানুষ? বাংলার বিপদে থাকো না, সুখে-দুঃখে খোঁজ নাও না। বন্যা হলে আসো না, খরা হলে দেখা পাওয়া যায় না। সবক্ষেত্রে বাংলাকে বঞ্চনা করবে, আর ভোটের সময় বসন্তের কোকিলের মতো এসে কুহুকুহু করবে, বলবে ভোট দাও, ভোট দাও। রাজ্যের নাম বাংলা করার প্রস্তাবকে আটকে রেখেছে, আটকে রেখেছে বন্দর করার প্রস্তাব, আর আটকে রেখেছে দেওচা-পাচামি থেকে কয়লা তোলার জন্য সামান্য একটা মউ স্বাক্ষর প্রক্রিয়া। এসব মানুষ জানে, কেন ভোট দেবে? ৩৬৫ দিন বাংলার মানুষের সুখে-দুঃখে থাকি আমরা। গরিব হতে পারি, কিন্তু যা আছে, সবাই মিলে ভাগ করে খাই। কোথায় থাকো তখন তোমরা? ওরা আসবে আর যাবে, আমাদের কিছু যায় আসে না। যারা বাংলাকে চেনে না, বাংলার সংস্কৃতি বোঝে না, যারা দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানাতে মা কালীর ছবি দিয়ে ট্যুইট করে, তাদের পাশে থাকবে বাংলার মানুষ! কখনওই নয়। ওরা আসবে যত, ভোট বাড়বে তত।
প্রশ্ন: ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক শক্তি বামেদের প্রাসঙ্গিকতা কি এই নির্বাচনে আদৌ আছে? আপনার অভিমত কী?
মমতা: ক্ষয়িষ্ণু শক্তি তো বটেই, তবে যেটুকু শক্তি এখনও রয়েছে, তা দিয়ে এখন বামেরা রামদের জেতাতে চাইছে। বাম-রাম মিলেমিশে একাকার। নিজেদের ভোট ট্রান্সফার করার জন্য সর্বত্র প্রচার করছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় একই বয়ানে আমাদের বিরোধিতা। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের ভোটে সিপিএমের নেতারা তো প্রচার সভায় বলেছেন বিজেপিকে ভোট দিতে। ভোটের দিন দুর্গাপুরে সিপিএম সরাসরি বিজেপির হয়ে ভোট করিয়েছে। এরাজ্যে কংগ্রেস, সিপিএম আর বিজেপি—জগাই, মাধাই আর গদাই সব এক! সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপির ওস্তাদ হয়েছে। লাল জামা ছেড়ে গেরুয়া কুর্তা পরেছে। মানুষ কি ওদের ৩৪ বছরের অত্যাচার ভুলে গিয়েছে? কেউ ভোলেনি, তাই ওরা বিচ্ছিন্ন! এখন চাইছে, মমতা যাক, বিজেপি আসুক। ভেবেও দেখছে না, বিজেপি এলে কী অবস্থা হবে! ত্রিপুরা তো তার টাটকা প্রমাণ। ২০১১ সালে যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, সব ক’টা অত্যাচারীকে জেলে পোরা উচিত ছিল। তা করিনি, আমাদের স্লোগান ছিল, বদলা নয়, বদল চাই। সুখে-শান্তিতেই আছে সিপিএম তথা বাম শিবিরের লোকজন। নিজেদের ক্ষমতা নেই। তাই বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ। আমার বিশ্বাস, প্রকৃত বামপন্থীরা বিপদটা বোঝেন। তাঁরা বিকিয়ে যাননি। তাঁদের কাছে আমার আবেদন, বন্ধুরা, বিজেপির সঙ্গে একমাত্র আমরাই লড়াই করি। তাই আমাদের সাথ দিন। ধর্মনিরপেক্ষ জনতার সরকার গড়তে আমাদের পাশে থাকুন।
প্রশ্ন: বিভিন্ন নির্বাচনী সভায় রামের নামে বিজেপির ভোট ভিক্ষে নিয়ে নানা কথা বলছেন। ভগবান রামচন্দ্রকে ওরা কীভাবে ব্যবহার করছে?
মমতা: পাঁচ বছরে কী কাজ করেছে, ওদের ছোট-বড় কোনও নেতাই হিসেব দিতে পারছেন না। প্রচারে, মিটিংয়ে, সভা আর মিছিলে একটাই স্লোগান—জয় শ্রীরাম। অর্থাৎ শুরুটাই ভগবান রামচন্দ্রকে নিয়ে। আর দেখবেন, ভোটের সময় রামের নাম ওরা বেশি ব্যবহার করে। ‘রামবাবু’কে এজেন্ট করে ভোট ভিক্ষে করতে নেমেছে ওদের এ টু জেড, সবাই। রামনবমীতে গদা, তরোয়াল নিয়ে আস্ফালন করে ভয় দেখাচ্ছে। এটা কি রামচন্দ্র চেয়েছিলেন? রামরাজ্য মানে সবার উন্নতি, সবার জন্য উন্নয়ন। রামের নামে ভোট নিয়ে রাবণের মতো আচরণ, এরা রামভক্ত! আমি তো অনেক সভায় বলেছি, আবার বলছি, ওরা ভোটের জন্য যেন সীতা মাতার কাছে তাঁর স্বামীকে ধার চেয়ে নিয়েছে। তাঁর নাম বারবার ব্যবহার করায় স্বয়ং ভগবান রামও বোধহয় বিরক্ত। তাই সীতা মাতাকে বলছেন, দেখ নিশ্চয়ই ভারতে ভোট এসেছে, তাই আমার নাম এতবার ব্যবহার করছে বিজেপি। রামের নাম ব্যবহার করে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছ, এবারও সেই নাম ব্যবহার করছ! অথচ একটা ছোট মন্দিরও করতে পারলে না রামের। অথচ ওদের পোস্টার বয় নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় গিয়ে ফের সেই প্রতিশ্রুতিই বিলি করে এলেন। মানুষ এসবই বোঝে। এমনকী এই নিয়ে গেরুয়া শিবিরেও ক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাম কারও দলীয় সম্পত্তি নন, কোনও দলকে তার সন্তানের পেটেন্ট দেননি দশরথ, রামচন্দ্র সবার।
প্রশ্ন: নরেন্দ্র মোদি দাবি করছেন, আপনার দলের ৪০ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে রয়েছেন। এই বিষয়ে কিছু বলবেন?
মমতা: লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে বিধানসভার হর্স ট্রেডিং করছেন মোদিবাবু। যা বলছেন, এটা কোনও প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভা পায় না। ৪০ জন এমএলএ! ৪০ জন ছাড়ুন, একজনের নাম তো বলুন! পয়সা দিয়ে বিজেপিকে কেনা যায়, তৃণমূলকে নয়। দু’-একটা গদ্দার ছিল, চলে গিয়েছে। তাদের সব চাই, বিরাট চাহিদা। সব দিতে হবে তাদের, সব নিতে হবে তাদের। এখন তারা বিজেপি হয়েছে। তাদের ফিসফাস কথা কানে নিয়ে এরা (মোদি-শাহ) লাফাচ্ছে। এর আগেও এদের দলের এক একজন নেতা, এক এক রকম হিসেব দিয়েছেন। কেউ বলেছেন ১০০ বিধায়ক আবার কেউ বলেছেন ২০০ তৃণমূল বিধায়ক নাকি পা বাড়িয়ে রেখেছেন। ওরা এসব বলে বাজার গরম করছে। মা-মাটি-মানুষের সৈনিকরা এতে বিচলিত হয় না, বিভ্রান্ত হয় না। এসব প্রচারে কিছু যায় আসে না। এখনও যাদের ইচ্ছে আছে, চলে যেতে পারে। আমি আমার দলের ছাত্র-যুবদের মধ্যে থেকে আবার তৈরি করে নেব পরবর্তী প্রজন্ম। এই বিশ্বাস বাংলার মানুষের ভরসাতেই আরও দৃঢ় হয়েছে।
প্রশ্ন: ক্ষমতায় ফিরলে অসমের পর এখানেও এনআরসি লাগু করার কথা বলছে বিজেপি। এনআরসি প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?
মমতা: এনআরসি করে অসমে ২২ লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে উৎখাত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাকিরা বাঙালি মুসলমান, বিহারি, নেপালি সহ দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। যাদের ভোটার পরিচয়পত্র আছে, দেশের নাগরিক হওয়ার যাবতীয় নথি রয়েছে, কেবলমাত্র ৫০ বছর আগে তার বাবা-মায়ের জন্মনথি না থাকার কারণে, তারা বিদেশি। এটা হয় নাকি? আমিও তো আমার মা-বাবার জন্ম সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারব না, তাহলে আমিও কি বিদেশি? অসমে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে এনআরসি চালু করছে, বিদেশি চিহ্নিত করছে। অথচ তথাকথিত সেই বিদেশিদের ভোটেই ওরা (বিজেপি) ক্ষমতায় এসেছে। এটা দ্বিচারিতা। বাংলায় এনআরসি করতে দেব না। আগে এন করে দেখাক, পরে তো আরসি। দেখুন, এর আগেই তো এনবিসি পেয়ে যাবে বিজেপি। ন্যাশনাল বিদায় সার্টিফিকেট।
প্রশ্ন: দেশে কংগ্রেসের সম্ভাবনা কতটা? আপনার কী মনে হয়?
মমতা: কংগ্রেস নিজের অবস্থান নিজেই অনেকটা দুর্বল করেছে। বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে ওরা অনেকটা নিষ্প্রভ। এই রাজ্যে তো কংগ্রেস, সিপিএম আর বিজেপি মিলেমিশে চলছে। এমন অবস্থান নিচ্ছে, যাতে কোথাও কংগ্রেসের সাহচর্যে বিজেপি’র, আবার কোথাও বিজেপি’র সাহচর্যে কংগ্রেসের সুবিধা হয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেস একা কিছুই করতে পারবে না। যেমন বিজেপি’ও পারবে না। কংগ্রেস বা বিজেপি কেউই ১০০’র বেশি সিট পাবে না।
প্রশ্ন: মানুষ চাইছে জনগণের সরকার। বাংলা চাইছে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী। এবার কি সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে?
মমতা: বিষয়টা বাংলা, গুজরাত, বিহার বা উত্তরপ্রদেশের নয়। গোটা দেশের। দেশের সামনে এখন একটাই লক্ষ্য, জনবিরোধী নরেন্দ্র মোদি সরকারকে হটাতে হবে ক্ষমতা থেকে। বাংলা, বিহার, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ কোথায় মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে মোদি সরকার? সবাই মিলেই তাই শপথ করেছি এই সরকারকে সরানোর। আমি আগেও বলেছি, বাংলা গদির জন্য লালায়িত নয়। বাংলা পদ চায় না। তবে জনগণের পক্ষে একটা সরকার গড়ার জন্য বাংলা তার দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবে।