বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
রাজ্য বার কাউন্সিলের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, মহিলা আইনজীবীদের শ্লীলতাহানির পাশাপাশি আদালত চত্বরে ঢুকে পুলিস যেভাবে বিচারকদের উপস্থিতিতে তাণ্ডব চালিয়েছে, কাঁদানের গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে, অশ্লীল শব্দের ফোয়ার ছুটিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। যার প্রতিবাদে ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল রাজ্যের সব আদালতে কর্মবিরতি পালন করার জন্য কাউন্সিল এদিন ডাক দিয়েছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, বুধবার যারা গণ্ডগোল করেছে, তারা আইনজীবী বলে আমরা মনে করি না। বিজেপি ও সিপিএমের কিছু গুন্ডা সাদা জামা পরে পরিকল্পনা মাফিক এই কাজ করেছে। নির্বাচনের সময় অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করতে বিজেপির এক পরিচিত নেতা তার বাহিনীকে সাদা জামা পরিয়ে এই গণ্ডগোল করিয়েছে। আমি সবসময়ই আইনজীবীদের পাশে ছিলাম ও আছি। কিন্তু কেউ পরিকল্পনা করে গণ্ডগোল পাকিয়ে নির্বাচনের আগে ফায়দা তুলতে চাইলে তা বরদাস্ত করব না। অরূপবাবু বলেন, এখন পুলিস-প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই ঘটনায় কারা দোষী, পুলিস নিরপেক্ষ তদন্ত করে চিহ্নিত করুক।
বুধবার আদালত চত্বরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পর্যন্ত কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাওড়া আদালতের আইনজীবীরা। এদিন তাঁরা প্রতিবাদ মিছিলও করেন। আইনজীবীদের আচমকা কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে কাজের জন্য জেলা সদরে এসে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষকে চরম হয়রানিতে পড়তে হয়। উলুবেড়িয়া সিভিল অ্যান্ড ক্রিমিনাল বার অ্যাসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে শতাধিক আইনজীবী উলুবেড়িয়া আদালতের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পরে তাঁরা একটি প্রতিবাদ মিছিল করে শহর পরিক্রমা করে উলুবেড়িয়ার মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পাশাপাশি আদালতে কর্মবিরতি পালন করেন। হাওড়ার মতো এদিন হুগলির শ্রীরামপুর আদালতেও কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা।
বাদ যায়নি কলকাতাও। হাওড়া আদালতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন আলিপুর, শিয়ালদহ এবং ব্যাঙ্কশাল আদালতের আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করেন। তাঁরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের অ্যাডভোকেট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয়শঙ্কর চৌবে জানান, তাঁরা এদিন মিছিলের পাশাপাশি মুখ্য বিচারক ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ডেপুটেশন দেন। ব্যাঙ্কশাল ও আলিপুরের আইনজীবীরা জানান, আগামী সোমবার পর্যন্ত চলবে এই কর্মবিরতি। এদিকে, রাজ্য বার কাউন্সিল সদস্য তথা আলিপুর কোর্টের তৃণমূল আইনজীবী সেলের কর্তা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ, শুক্রবার তাঁরা হাওড়া জেলা জজের কাছে বিষয়টি নিয়ে দরবার করবেন। আগামী মঙ্গলবার বিকেলে বার কাউন্সিলের এক প্রতিনিধিদল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে বিষয়টি উত্থাপন করবে। অন্যদিকে, একইভাবে এদিন বারুইপুর, ডায়মন্ডহারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমা আলাদতেও কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। কর্মবিরতির জেরে বিচারপ্রার্থীরা এদিন সমস্যায় পড়েন।
প্রসঙ্গত, মোটরবাইক রাখাকে কেন্দ্র করে আইনজীবী ও পুরকর্মীদের মধ্যে প্রথমে বচসা এবং পরে হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাওড়া আদালত চত্বর। উভয় পক্ষের ইঁট ছোঁড়াছুঁড়িতে বেশ কয়েক জন জখম হন। খবর পেয়ে পুলিস এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিতে হাওড়া আদালতের আইনজীবীরা কর্মবিরতি শুরু করেন।