নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও বিএনএ: মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় রাজ্যে পাঁচ কেন্দ্রের ভোটে রক্তাক্ত হল মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদেই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে এক কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই লোকসভা কেন্দ্রের আরও কিছু জায়গায় বোমাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পাঁচ কেন্দ্রেই তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপির বহু কর্মী সমর্থক জখম হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। ন’জন জখম হয়েছেন। পাঁচটা পর্যন্ত গড়ে ভোট পড়েছে ৭৮.৯৭ শতাংশ। চারটি এফআইআর হয়েছে। ২৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে সাতজনকে নির্দিষ্ট কেসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে এডিজি আইনশৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্তা জানান।
তৃতীয় দফায় এরাজ্যের বালুরঘাট, মালদহ উত্তর, মালদহ দক্ষিণ, জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয় মঙ্গলবার। সকাল থেকে বিভিন্ন বুথে বহু ইভিএম বিকলের খবর থাকলেও চারটি কেন্দ্রে মোটের উপর শান্তিতে ভোট হয়েছে। কিন্তু রক্তাক্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদ। এদিন দুপুরে রানিতলা থানার বালিগ্রামে বুথের বাইরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের সংঘর্ষে টিয়ারুল শেখ নামে এক কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের আরও দু’জন। ভোটের ময়দান নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে বিরোধের জেরে দু’পক্ষের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। উভয়পক্ষই একে-অপরের উপর লাঠি, হাঁসুয়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কংগ্রেস এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে। পাল্টা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। মৃতের ছেলের অভিযোগ, ভোট দিয়ে বাড়ির ফেরার সময় টিয়ারুলের ওপর হামলা করা হয়। পুলিস ও প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, এলাকায় ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবেই চলে। বুথের বাইরে একটি ঝামেলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তৃণমূলের পক্ষে ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ঘটনাটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত। তবে, যদ্দুর শুনেছি ওর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। পারিবারিক বিবাদের জেরেই ওই ঘটনা। সিইও আরিজ আফতাব জানিয়েছেন, বুথ থেকে ৩০০ মিটার দূরে ওই ঘটনা ঘটেছে। মূল অভিযুক্তসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সকালে ডোমকল শহরের মানিকনগর এলাকায় বোমাবাজি হয়। স্থানীয় কাউন্সিলারের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা তুজামেল শেখের উপর হামলা করার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে। ডোমকলের টিকটিকিপাড়ায়ও ব্যাপক বোমাবাজি হয়। এখানেও মানিক শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধে। বোমাবাজি হয় হিতানপুরেও। ইসলমাপুর থানার লোচনপুরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে তিনজন জখম হয়েছেন। তঁাদের মধ্যে দু’জন তৃণমূল এবং একজন কংগ্রেস কর্মী। আহত হয়েছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য শফিয়ার হোসেন।
এদিন বালুরঘাট কেন্দ্রের কুশমণ্ডির চাঁদপুরে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে  দু’পক্ষের পাঁচজন জখম হন। গঙ্গারামপুরের সাহাপাড়া বুথে বালুরঘাট কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী সুকান্ত মজুমদারকে ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ উঠেছে। তপনের উত্তর বজরাপুকুর এলাকায় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে মন্টু রায় নামে এক তৃণমূল কর্মী ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন। দক্ষিণ মালদহের কালিয়াচক-৩ ব্লকের গোপালনগরে সংঘর্ষে এক মহিলা সহ তিনজন জখম হয়েছেন। কালিয়াচকের‌ গোঁসাইপাড়া বুথে বোমার ঘায়ে তিন কংগ্রেস কর্মী জখম হন। চাঁচলের শ্রীপতিপুর প্রাথমিক স্কুল ও ইসলামপুর প্রাথমিক স্কুল ও ধুমসাডাঙি প্রাইমারি স্কুলে ব্যাপক বোমাবাজি অভিযোগ ওঠে। এদিন উত্তর মালদহের রতুয়ায় বাহারালের ৭৭ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বুনিয়াদপুরে রিজার্ভে থাকা এক ভোটকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। নিজের বাড়িতেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।