পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
প্রায় তিন বছর আগে হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। বাম-কংগ্রেস সমঝোতা করলেও তারা ২৫ শতাংশের মতো ভোট পেয়েছিল। প্রথমবারের জন্য রাজ্য বিধানসভায় তিনজন বিধায়ক পেলেও বিজেপির ভাগ্যে জুটেছিল ১০.৭ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদির হাওয়ায় বিজেপির ভোট বেড়ে ১৭ শতাংশ হলেও তিন বছরের মধ্যে তা প্রায় সাত শতাংশ নেমে আসে। উল্লেখ্য, তারপর থেকে গত কয়েক বছরে যত উপনির্বাচন হয়েছে, সর্বত্রই বিজেপির ভোট বেড়েছে। ভোট বেড়েছে তৃণমূলেরও। তবে, বিজেপির ভোট বৃদ্ধির উল্টোদিকে দ্রুতহারে ভোট কমেছে বাম ও কংগ্রেসের। এদিকে, জাতীয় রাজনীতিতেও কেন্দ্রের এনডিএ সরকার তথা মোদির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন মমতা। সেই পটভূমিতে বাংলায় বিজেপি-তৃণমূল মেরুকরণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে চলতি লোকসভা ভোটে।
একদিকে তৃণমূলের ক্রমবর্ধমান নির্বাচনী সাফল্য, অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেসের ভোট ভেঙে ক্রমে পুষ্ট হয়ে চলেছে গেরুয়া বাহিনী। এই মেরুকরণ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবারের লোকসভা ভোটের ময়দানে। রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসের বিজেপি বিরোধিতা বস্তুত খাতায়-কলমে। কার্যক্ষেত্রে তৃণমূল বিরোধিতার সঙ্গে একবিন্দুতে মেলাতে গিয়ে দলের নিচুতলার মধ্যে বিজেপির প্রতি ঝোঁকের প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। যা শুধু রাজনৈতিক বিপর্যয় নয়, মতাদর্শগত অবক্ষয়ের শামিল বলে মনে করছে বামপন্থীদের একাংশ। দমদম লোকসভা কেন্দ্রের এক অভিজ্ঞ সিপিএম নেতা দলের কর্মী ও সমর্থকদের একাংশের এই ঝোঁকের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বর্ষীয়ান ওই নেতার মতে, গত বিধানসভা ভোটে যেটুকু ভোট পেয়েছিলাম, তা ধরে রাখতে হবে। সেটাই তাঁদের কাছে চ্যালেঞ্জ। আগে কখনও এমন কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়নি দলকে, কবুল করেছেন তিনি। একইসঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও রাজ্যে তৃণমূল বিরোধিতার তত্ত্বেই এই সঙ্কট কি না, তা অবশ্য খোলসা করতে চাননি তিনি। তবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের কমরেডরা যাতে নিজেদের প্রার্থীকেই সমর্থন করেন, সেদিকে নজর রাখতে হচ্ছে।
প্রায় একই অবস্থা কংগ্রেসের। তৃণমূলের প্রবল পরাক্রমে রাজ্যে কংগ্রেসের ভাঙন তার অস্তিত্ব সঙ্কট তৈরি করেছে। তিন জেলার গোটা চারেক আসন বাদ দিলে দলীয় সমর্থকদের উপরেও পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বের একাংশ। ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের সঙ্গে যতই সংঘাত থাক না কেন, বাংলায় তাদের তৃণমূলপন্থী হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক প্রবণতা বলে গণ্য। ২০১৬ সালেও তৃণমূলকে সমর্থন করেনি, তারা কি পদ্মফুলে ঝুঁকতে পারে? এই সংশয় উড়িয়ে দিতে পারেননি ওই নেতা। বাংলায় বাম ও কংগ্রেসের এই দোলাচল টের পেয়েছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, সদ্য হয়ে যাওয়া রাজ্যের বার কাউন্সিল ভোটে যেভাবে কংগ্রেস, বাম ও বিজেপি একজোট হয়ে লড়েছিল, তা অভূতপূর্ব। যদিও সবপক্ষ একজোট হয়েও গোহারা হেরেছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, রাজ্যের বিরোধীদের এই গোপন বোঝাপড়ার কারণেই মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর নির্বাচনী সভায় এই রামধনু জোট নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলীকে সতর্ক করতে হয়েছে।