নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সোমবার থেকে দেশজুড়ে প্রথম দফার লোকসভা ভোটের মনোনয়নপত্র পেশ করার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। কেন্দ্র দু’টি হল কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার। গত ১০ মার্চ জাতীয় নির্বাচন কমিশন দেশজুড়ে লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছেন। বামফ্রন্টের তরফেও ২৫টি কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এরকম একটা অবস্থায় রাজ্যের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দৌড়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। সেই তালিকা কবে প্রকাশ করা হবে, তা নিয়ে ধন্দে খোদ গেরুয়া শিবিরের বাংলার নেতারা। জেলাস্তরের নিচুতলার কর্মীদের উপর যা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এ প্রসঙ্গে দলের এক রাজ্য নেতা বলেন, পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় শাসকদলের গুন্ডাবাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত লড়াই করে জমি ধরে রাখতে হচ্ছে আমাদের। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এলাকায় দেওয়াল লিখন, পোস্টার মারা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ সহ একাধিক বিষয়ে ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আর বেশি দেরি হলে কোনও কোনও অঞ্চলে বিজেপির হয়ে লেখার দেওয়াল বাঁচিয়ে রাখাই কষ্টকর হবে। এই মুহূর্তে দেশজুড়ে বিজেপির পক্ষে হাওয়া রয়েছে বলে মনে করেন ওই নেতা। তাকে কাজে না লাগিয়ে তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেস থেকে নেতা ভাঙানোর খেলায় মজে থাকার এই প্রবণতা সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও দাবি ওই নেতার। অবিলম্বে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে লোকসভা কেন্দ্রওয়াড়ি প্রচার শুরুর দাবি করেছেন ওই বিজেপি নেতা।
যদিও দলের অপর একটা অংশ তার উল্টো কথা বলছে। সংশ্লিষ্ট অংশের দাবি, সোমবারই দেশের একাধিক রাজ্যের পাশাপাশি বাংলার অন্তত প্রথম দু’টি দফার নির্বাচনে মোট পাঁচটি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু রবিবার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্করের প্রয়াণে দলের সংসদীয় বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই বৈঠকে যোগ দিতে বাংলা পার্টির শীর্ষ নেতাদের সোমবার রাতের বিমানে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সেই টিকিট আপাতত বাতিল করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, সোমবার বেশি রাতে কিংবা মঙ্গলবার সকালে ফের প্রার্থী বাছাইয়ের চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম দু’দফার পরিবর্তে রাজ্যের প্রথম তিন দফার মোট ১০টি আসনে বিজেপির প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, বিজেপি একটি সর্বভারতীয় দল। লোকসভা ভোটে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে খোদ প্রধানমন্ত্রীর মতো ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় একাধিক পর্যায় থাকে। সায়ন্তনবাবুর কটাক্ষ, তৃণমূলের মতো খুচরো দলে পিসি-ভাইপো মিলে প্রার্থী ঠিক করে। তাই সাধারণ মানুষ খুব ভালো করে জানেন কোন দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এই বিলম্বের জন্য নিচুতলায় কি ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে? সায়ন্তনবাবু বলেন, বিজেপি একটি সুশৃঙ্খল দল। দলের প্রতিটি কর্মী নিজেদের সৈনিক মনে করেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য, নরেন্দ্র মোদিকে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী করা। তাই দল যাঁকে মনে করবে, লোকসভা আসন জেতার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে আমরা তাঁকেই মেনে নেব।