নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে রবিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হল। কালবৈশাখী ঝড়ে সন্ধ্যার পরে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার জনজীবন বেশ লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। কলকাতার কয়েকটি রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। ইএম বাইপাসের রাসবিহারী কানেক্টর ও উত্তর কলকাতায় আর জি কর রোড ও রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের সংযোগস্থলে গাছ পড়েছে বলে কলকাতা পুলিস জানিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের ভাষা মঞ্চের লোহার আচ্ছাদন ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ সদস্য দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন। উল্টোডাঙা সহ শহরের অনেক জায়গা থেকে রাতে রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড্গপুর শাখায় বাগনান ও দেউলটির মাঝে রেলের ওভারহেড তার ছিঁড়ে পড়ায় ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লক্ষ্মীকান্তপুর ও বজবজ শাখায় ঝড়ে ওভারহেড তারে গাছ ভেঙে পড়ার কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। ঝড়ের দাপটে কলকাতা বিমানবন্দরে কয়েকটি বিমান নামতে না পেরে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ আলিপুরের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার গতিবেগে কালবৈশাখীর ঝড় বয়ে গিয়েছে। তবে এই বৃষ্টিতে গরম কমে স্বস্তি মিলেছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি থাকবে। তবে আজ, সোমবার ঝড়-বৃষ্টি হলেও তার মাত্রা কিছুটা কম হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিন সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর, গড়িয়া এলাকায় শিলাবৃষ্টিও হয়। প্রবীণ আবহাওয়াবিদ মিহির গুহ জানিয়েছেন, এই সময় কালবৈশাখীর ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা থাকে। এই সময় যে বজ্রমেঘগুলি সৃষ্টি হয় তার উচ্চতা অনেক বেশি থাকে। বেশি উচ্চতার কারণের শীতলতার জেরে জলীয় বাষ্প অনেক সময় কঠিন বরফে পরিণত হয়। ওই বরফ উপর থেকে শিলার আকারে নেমে আসে।
আবহাওয়ার দপ্তর দুই দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে রবিবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখীর অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। শুক্রবারও কোথাও কোথাও ঝড় বৃষ্টি হলেও তার মাত্রা এতটা বেশি ছিল না। রবিবার দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া দপ্তর স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন জেলার জন্য ঝড়-বৃষ্টির নির্দিষ্ট সতর্কবার্তা জারি করতে থাকে। দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, নদীয়া, কলকাতা, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ জেলার জন্য পর্যায়ক্রমে সতর্কবার্তা জারি করা হয়। ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে ঝড় আসার পুর্বাভাস দুপুর নাগাদ জারি করে আবহাওয়া দপ্তর।