দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি, ১৭ মার্চ: ৪০০ জনের মধ্যে থেকে কে হবেন প্রার্থী, তা নিয়েই বিজেপিতে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। রাজ্যের ৪২টি আসনের জন্য কয়েক হাজার নাম জমা পড়েছিল বিজেপিতে। তার মধ্যে থেকে ঝাড়াই বাছাই করে প্রায় ৪০০ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম নিয়ে রবিবার দিল্লিতে এসেছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
বঙ্গ বিজেপির অন্য শীর্ষ নেতৃত্বও দিল্লিতে এসেছে। বাংলার দলীয় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করার আগে এদিন বঙ্গ নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠকও সেরেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এখনও পর্যন্ত দলীয় সূত্রের খবর, দার্জিলিং ও আসানসোলে দলের প্রার্থী বদল হচ্ছে না। এদিকে, অমিত শাহের দেওয়া ২৩টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের থেকেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া কার্যত বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বঙ্গ বিজেপির। ভিন দল থেকে বিজেপিতে এসেই গেরুয়া শিবিরের টিকিট পেয়ে গেলে প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দলের নিচুতলায় তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হবে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এমনটাই জানিয়েছেন দলের বঙ্গ শিবিরের নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, ভিন দল থেকে যাঁরা সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাব্য খবরে ইতিমধ্যেই দলের নিচুতলার একটি অংশে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলার ৪২টি কেন্দ্রের জন্য প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে মাথায় রাখার জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও আর্জি জানিয়েছে বঙ্গ বিজেপি।
এদিন দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে প্রার্থী হতে চেয়ে প্রচুর আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে থেকে ঝাড়াই বাছই করে ৪২টি আসনের জন্য প্রায় ৪০০ জনের নাম নিয়ে আমি দিল্লিতে এসেছি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহই ডেকে পাঠিয়েছেন আমাদের।’ এমনিতেই বাংলার জন্য দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। যদিও বিষয়টিকে বিজেপি নেতারা অন্যভাবে দেখছেন। তাঁদের মতে, এর থেকেই স্পষ্ট, বাংলায় বিজেপির প্রতি মানুষের উৎসাহ বেড়েছে। সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদির দলের প্রার্থী হতে ভুরি ভুরি আবেদন জমা পড়ছে। দমদম, কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বালুরঘাটের মতো একাধিক কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হতে চেয়ে গড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়াও বাকি লোকসভা আসনগুলিতে প্রার্থী হতে চেয়ে বিজেপির দপ্তরে কেন্দ্রপিছু গড়ে প্রায় ১৫টি করে আবেদন জমা পড়েছে। যদিও তার মধ্যে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের নাম থাকবে বলেই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিজেপির অন্দরের খবর, রাজ্যের যে দুটি আসনে দলের সংসদ সদস্য রয়েছেন, সেই দার্জিলিং এবং আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সম্ভবত দলীয় প্রার্থীকে বদল করা হবে না। গতবারের জয়ী প্রার্থীরাই এই দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেইমতোই দার্জিলিং লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। আসানসোলে তৃণমূলের প্রার্থী মুনমুন সেনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়ই। কোচবিহার থেকে প্রার্থী হতে পারেন দীপক বর্মন। আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে প্রার্থী হতে পারেন মনোজ টিগ্গা। কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের অন্যতম সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকে। যদিও বিজেপি দাবি করছে, কয়েকদিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ভিন দলের আরও কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে গেরুয়া শিবিরে যোগদান করানো হবে। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ফের বদলে যেতে পারে।