নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের কাছেই ওড়িশায় একটি নতুন গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির কাজ শুরুর প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। ওড়িশার বালেশ্বর জেলার এই সুবর্ণরেখা বন্দরটি প্রস্তাবিত তাজপুর বন্দরের প্রতিযোগী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন কলকাতা বন্দরের আধিকারিকরা। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যেখানে সুবর্ণরেখা নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে, সেখানেই এই বন্দরটি তৈরি হবে। বেসরকারি উদ্যোগে এই বন্দরটি নির্মাণ করা হবে। বন্দর নির্মাণের সব ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই বন্দরের থেকে চাঁদিপুরের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র কাছে হওয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ছাড়পত্র গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কয়েক মাস আগে সেটাও দিয়ে দিয়েছে। ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যে বন্দর নির্মাণের জন্য ৬৯২ একর জমি উদ্যোগীদের হস্তান্তরিত করেছে। আরও ১২৮ একর জমি সরকার দেবে। উত্তর ওড়িশা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও নেপালের পণ্য এই বন্দর দিয় ওঠা-নামা করতে পারবে। সুবর্ণরেখা বন্দরে ১৮ মিটার জলের গভীরতা মিলবে। এই গভীরতায় এক লক্ষ টনেরও বেশি ধারণ ক্ষমতার জাহাজ এখানে আসতে পারবে। ওড়িশার ভদ্রক জেলার ধামড়াতে একটি বেসরকারি বন্দর ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। এই বন্দরটি চালু হওয়ায় কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হলদিয়া বন্দরের উপর। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সুবর্ণরেখা বন্দরের দূরত্ব ধামড়ার থেকে অনেকটা কম।
কেন্দ্রের ভূমিকায় বিরক্ত হয়ে সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারাই তাজপুর বন্দরটি তৈরি করবে। আগে ঠিক ছিল, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের অধীনস্থ কলকতা বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগের সংস্থা ‘ভোরসাগর’ তাজপুর বন্দরটি নির্মাণ করবে। এই উদ্যোগ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও সরকারিভাবে দেওয়া হয়নি। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত জাহাজ মন্ত্রক নেবে। তাজপুর বন্দর নির্মাণের জন্য আর্থ-কারিগরি সমীক্ষা করাচ্ছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত জুন মাস থেকে এই কাজ চলছে। জানুয়ারি মাসে রিপোর্ট জমা পড়ার কথা। রিপোর্ট জমা পড়ার পর বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরির কাজ শুরু হতো। কলকাতা বন্দরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আর্থ-কারিগরি সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হবে কীভাবে তাজপুরে বন্দর তৈরি করা হবে। আনুমানিক খরচও জানা যাবে এর থেকে। পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ায় এই রিপোর্টটি নিয়ে এখন বন্দর কর্তৃপক্ষ কী করবে, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন। বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, জাহাজ মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বন্দর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর করতে হবে সমুদ্রের অনেকটা ভিতরে গিয়ে। তা না করলে জলের বেশি গভীরতা পাওয়া যাবে না। জলের গভীরতা বেশি হলেই ত঩বেই বিশাল বড় ক্যাপসাইজ জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। এর জন্য উপকূল থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার যেতে হতে পারে। সমুদ্রের মধ্যে বালি-পলি ফেলে কৃত্রিম স্থলভূমি সৃষ্টি করে জাহাজ ভেড়ার বার্থ নির্মাণ করতে হবে। জাহাজ ঢোকার চ্যানেল তৈরি করতে হবে। সমুদ্রের মাঝে বন্দরকে ঝড়ের থেকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ঩বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। বন্দরের কাছে রেল-সড়ক নিয়ে আসতে হবে। তার জন্য খরচ হবে প্রচুর। তাজপুর বন্দর তৈরির জন্য রাজ্য সরকার বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করবে কি না, সেব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয়নি।