বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কারো মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে রেশন কার্ড ‘সারেন্ডার’ করার নিয়ম আছে। এর জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম রয়েছে। মৃত রেশন গ্রাহকের কার্ড দেখিয়ে শেষ কবে খাদ্যসামগ্রী তোলা হয়েছে, তার সার্টিফিকেট নিতে হয় ওই ডিলারের কাছ থেকে। কিছু পুরসভা ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করার সময় রেশন কার্ড ফেরত দেওয়ার প্রমাণ চায়। কিন্তু এটা সব জায়গায় চালু হয়নি। গ্রাহক রেশন কার্ড সারেন্ডার করলেও অনেক সময় সেই তথ্য খাদ্য দপ্তরের কাছে আসছে না বলেও মনে করছেন আধিকারিকরা। তাই মৃত রেশন গ্রাহকের কার্ড যাতে নিশ্চিতভাবে বাতিল হয়, তার জন্য কোনও নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে দপ্তর।
মৃত গ্রাহকদের রেশন কার্ড বাতিল করার উদ্যোগের পিছনে আর্থিক কারণ আছে। মৃতদের রেশন কার্ডে বরাদ্দ করা চাল-গমের ভর্তুকির জন্য বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে সরকারের। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের (এনএফএসএ) সুবিধা প্রাপকের সংখ্যা কোন রাজ্যে কত হবে, তা কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৬ বছর আগে নির্ধারণ করে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোটা নির্ধারিত হয় ৬ কোটি ১ লক্ষ। বিভিন্ন রাজ্য থেকে এই কোটা বাড়ানোর দাবি উঠলেও কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে আর্থিক সমীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত এটার কোনও পরিবর্তন করা হবে না। এনএফএসএ-র মৃত গ্রাহকদের চিহ্নিত করে বাদ দিলে সেই জায়গায় নতুন নাম ঢোকাতে পারবে খাদ্য দপ্তর। এতে রাজ্যের আর্থিক চাপ কিছুটা কমবে। কারণ এনএফএস-র বাইরে থাকা রেশন গ্রাহকদের ভর্তুকির পুরো আর্থিক দায় রাজ্যকে নিতে হয়।
এনএফএসএ-র কোটা একই থাকলেও রাজ্য সরকার সবাইকে ডিজিটাল রেশন কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন নতুন আবেদনকারীদের রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের কার্ড দেওয়া হচ্ছে। সেই কার্ডের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সব মিলিয়ে রাজ্যে এখন প্রায় ৮ কোটি ৯০ লক্ষ রেশন কার্ড আছে। অর্থাৎ রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ। রাজ্য প্রকল্পের আওতায় থাকা মৃত রেশন গ্রাহকদের চিহ্নিত করে কার্ড বাতিল করলে রাজ্য সরকারের আর্থিক সাশ্রয় হবে। এখন খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় রাজ্য। কার্ডের সংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকারের ভর্তুকির অঙ্কও ততই বেড়ে চলেছে।
বামফ্রন্ট সরকারের রাজত্বে এক সময় রাজ্যে জনসংখ্যার থেকে রেশন কার্ডের সংখ্যা বেশি ছিল। প্রচুর সংখ্যায় ‘ভূতুড়ে’ রেশন কার্ড থাকার জন্য এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এক কোটি ৩৫ লক্ষ ভূতুড়ে রেশন কার্ড বাতিল হয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারও এই তথ্য স্বীকার করেছে।