বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মঙ্গলবার ভোরে মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণে সাগরসঙ্গমে ডুব দিল মিনি ভারত। এক লহমায় গঙ্গা ও সাগরের জলে মিশে গেল প্রদেশ, ভাষা, বর্ণ, উচ্চনীচ জাতপাত, ধনী, গরিব, নেতা, নেত্রী, সাধুসন্ত, সাধকের ভেদাভেদ। মহামানবের মিলনস্থল তৈরি হয়ে গেল পুরো সাগরতট। কেউ বার বার ডুব দিচ্ছেন, কেউ বালির উপর দিয়ে উপুড় হয়ে দণ্ডী কাটতে কাটতে জলের দিকে এগচ্ছেন। কেউ জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছেন, কেউ হাতে ছোট প্রদীপ নিয়ে আরতি করছেন, কেউ খোল করতাল নিয়ে নেচে নেচে নাম কীর্তন করছেন। কেউ সামনে বসে থাকা ফকির, সাধু, ভিক্ষুক ও গোরুর পায়ে প্রণাম ও প্রণামী দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের হিসেবে সব মিলিয়ে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখের উপর তীর্থযাত্রী স্নান করেছেন। তবে মেলার সূচনা থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৫ লাখ পুণ্যার্থী স্নানে এসেছেন বলে এদিন মেলা অফিসে বসে সাংবাদিক সম্মেলেন দাবি করেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যা গতবারের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে মন্ত্রীর দাবি। এরমধ্যে স্নান সেরে ২৪ লাখ মানুষ বেরিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, বহু মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। সকলেই মেলার ব্যবস্থপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সারক্ষণ পানীয় জল, অসংখ্য শৌচাগার, পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশংসা করে গিয়েছেন। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, জেলাশাসকের টিম, সুন্দরবন জেলা পুলিসের টিম, সাগরের বিধায়কের টিম, পরিবহণ, জনস্বাস্থ্য, পূর্ত, স্বাস্থ্য, বিপর্যয় মোকাবিলা, উপকূল রক্ষী বাহিনী ছাড়াও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলিতভাবে দিনরাত পরিশ্রম করেছে মেলাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করার জন্য। সেই কারণে পুণ্যার্থীদের সেবার পাশাপাশি এত বড় সর্বভারতীয় মেলায় কোনও অঘটন ঘটেনি।
এদিন ৪ জন তীর্থযাত্রী মারা গিয়েছেন। হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, অসুস্থ হয়েছিল মোট ৩৭ জন। কয়েকজন ছাড়া সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ৯৫ শতাংশকে আত্মীয়দের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, স্নান করতে আসা এক গর্ভবতী মহিলার প্রসব বেদনা হয়। মুড়িগঙ্গা নদী পার হওয়ার সময় শিশু প্রসব হয়েছে। দু’জনেই সুস্থ আছে। পুলিস সুপার তথাগত বসু বলেন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের জন্য ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ দশজন।
মঙ্গলবার ভোর তিনটের সময় সাগরতটে গিয়ে দেখা গেল, দিগন্ত ছোঁয়া গঙ্গা ও সাগরের সঙ্গমস্থল কুয়াশার চাদরে ঢেকে গিয়েছে। ঝাউবন ঘেঁষা মহাশ্মশান সংলগ্ন ১ নম্বর ঘাট থেকে পশ্চিমদিকের ৫ নম্বর পর্যন্ত শুধু কালো মাথা গিজগিজ করছে। সেই ভিড়ের মাঝে দেখা গেল বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার, সংসদ সদস্য সি এম জাটুয়া, বিধায়ক সমীর জানা, শক্তি মণ্ডলকে। দল বেঁধে সকলে ডুব দিলেন। ২ নম্বর স্নানের ঘাটে দেখা গেল বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। সোমবার তিনি স্নান করে গিয়েছেন। বললেন, ধর্মীয় এই মেলায় সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও আর্থিক বিষয় জড়িত। তাই তো এত মানুষের মিলন হয়।