সুকান্ত বসু, কলকাতা: রাজ্যে যাত্রাশিল্পের প্রসার ক্রমেই বেড়েই চলেছে। এই শিল্প আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোয় খুশি চিৎপুরের যাত্রা অপেরাগুলি। তাদের বক্তব্য, বাম আমলের শেষ দিকে এই শিল্প তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। পরবর্তীকালে মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর যাত্রাশিল্পে ফের চাকা ঘুরতে শুরু করে। লাভের মুখও দেখতে শুরু করে অপেরাগুলি। এই শিল্পকে ঘিরে উন্মাদনার পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। এই প্রেক্ষাপটেই শুরু হল ২৩ তম যাত্রা উৎসব। শুক্রবার বারাসতের কাছারি ময়দানে এই উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্র ও শনিবার ওই মঞ্চেই দু’টি যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়। তার একটি হল পৌরাণিক পালা ‘রানি রাসমণি’ এবং অন্যটি সামাজিক পালা ‘আজ প্রতিমার সিঁদুর দান’। এর রেশ ধরেই আজ রবিবার থেকে উত্তর কলকাতার বাগবাজার ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চে শুরু হচ্ছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে একমাসব্যাপী যাত্রা উৎসব। প্রথম দিন ‘হিসাব কষা ভালোবাসা’ যাত্রাপালার মধ্যে দিয়ে শুরু হবে এই উৎসব। যাত্রা অ্যাকাডেমি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই উৎসবে চিৎপুরের যাত্রা দলগুলির সঙ্গে অংশ নেবে প্রত্যন্ত জেলার অপেরাগুলিও। প্রতিদিন যাত্রাপালা শুরু হবে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। যাত্রা অ্যাকাডেমির সদস্য কনক ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিদিন বিকেল সাড়ে চারটে ৪টে থেকে একঘণ্টা মুক্ত মঞ্চে হবে যাত্রানুরাগীদের আড্ডা। থাকবে যাত্রা উন্নয়নে আলোচনা, ক্যুইজ ও প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে যাত্রার একাল সেকাল নিয়ে নানা তথ্য ফুটে উঠবে। প্রবীণ যাত্রাশিল্পী রুমা দাশগুপ্তের কথায়, এই শিল্পের যে একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে, তা সকলের জানা উচিত। এই ইতিহাসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক দুঃখ, অভাব, যন্ত্রণা, কষ্টের কথা। আমরা চাই স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যাত্রা দেখার পাশাপাশি ঘুরে দেখুক প্রদর্শনীও।
কলকাতা যাত্রাকর্মী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারাধন রায় বলেন, এবার বাগবাজারের যাত্রা উৎসব মঞ্চে যে পালাগুলি মঞ্চস্থ হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—‘জীবনের জংশনে প্রেমের ফেরিওয়ালা’, ‘দানবীর রাজা হরিশচন্দ্র’, ‘ঢপবাজ স্বামীর রংবাজ বউ’, ‘চাঁপাডাঙার বউ’, ‘দুই সতীনের ঘর’, ‘রাঙা মেয়ের ভাঙা জীবন’, ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়’, ‘নীল আকাশে নীলাঞ্জনা’, ‘ও প্রেম যমুনার মাঝি’, ‘ বাপেরও বাপ আছে’, ‘গোধুলি লগ্নে শুভ দৃষ্টি’, ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ প্রভৃতি। যাত্রাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের বক্তব্য, এই উৎসব আয়োজনের ফলে প্রতি বছরই গ্রামবাংলার নতুন নতুন মুখ সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী এই শিল্পকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন যাত্রা অ্যাকাডেমির সভাপতি অরূপ বিশ্বাস। ‘মা সারদা’ এবং ‘আজ প্রতিমার সিঁদুর দান’ পালার মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন পূবালি বসু। তিনি বলেন, সব থেকে বড় কথা হল নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফি বছর নতুন নতুন শিল্পীদের সরকারি তরফে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাঁদের যাত্রা অ্যাকাডেমির তরফ থেকে শংসাপত্রও দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই নবাগতরা যাত্রাপালায় অভিনয়ের সুযোগও পান। পালাকার মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপল রায়, অনল চক্রবর্তী প্রমুখ বলেন, এই শিল্প বাঁচলে, এর সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষের জীবনও বাঁচবে। তাই মাসব্যাপী যাত্রা উৎসবের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।