নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা এবং বিএনএ, আরামবাগ: শনিবার ভোরে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং হস্টেলে মেধাবী নার্সিং ছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ক্রমেই রহস্য দানা বাঁধছে। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মৃত ছাত্রী সমাপ্তি রুইদাসের বাঁ হাতের তালুতে নীল পেনের কালিতে লেখা ছিল, ‘আমার বালিশের তলায় খাতায় ফোল্ড করা পাতায় লেখা আছে’। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই নীল কালিতে লেখা অক্ষরগুলি তাঁদের মেয়ের হাতের লেখাই নয়। প্রশ্ন, তাহলে কার হাতের লেখা সেটি? বাড়ির লোকজন পুলিসেও অভিযোগ করেছেন, আত্মহননেই মেয়ের মৃত্যু, এ নিয়ে তাঁদের সংশয় রয়েছে। মৃতার বাবা সুকুমার রুইদাস রবিবার দাবি করেন, মেয়েকে কেউ মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে। কাকা উজ্জ্বল রুইদাস বলেন, ওর ডান কান ও চোখের নীচে আঘাতের চিহ্ন ছিল। সুকুমারবাবু এমনও বলেছেন, শনিবার সকালে নার্সিং স্কুলের তরফে ফোন পেয়ে আমরা কলকাতার ওই হাসপাতালে যাই। কিন্তু আমরা পৌঁছনোর আগেই ময়নাতদন্ত শেষ হয়ে যায়। পুলিস জানিয়েছে, তারা এই অভিযোগও পেয়েছে। তদন্ত হবে। সমাপ্তির ছোটবেলার গ্রামের বান্ধবী লাবণী রুইদাস বলেন, পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে ও হস্টেলে সিনিয়রদের হাতে মানসিক অত্যাচারের কথা বলেছে। বলেছে, হস্টেলে রাত অবধি পড়ার জন্য আলো জ্বালালে কথা শুনিয়ে দিত সিনিয়ররা। মাঝেমধ্যে পড়া ধরতও তারা। না পারলে হস্টেলের একতলা-পাঁচতলা সিঁড়িতে ওঠানামা করাত। যদিও স্বাস্থ্যভবনের নার্সিং শাখা সূত্রের খবর, তারা যা তথ্য পেয়েছে, তাতে এ মৃত্যুতে তেমন কোনও গূঢ় রহস্য নেই। এক নার্সিং কর্ত্রীর দাবি, পুজোর ছূটিতে বাড়ি গিয়ে ফিরতে চাইছিল না সমাপ্তি। তার নার্সিং পড়তে ভালো লাগছিল না। রাজ্য নার্সিং কাউন্সিলের উপদেষ্টা ডাঃ নির্মল মাজি বলেন, এই মৃত্যু ঘিরে যখন নানা প্রশ্ন উঠেছে, সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।
ঘটনার পর ওই হস্টেলের এক সিনিয়র টিউটরকে শো-কজ করেছেন ন্যাশনালের সুপার ডাঃ সন্দীপ ঘোষ। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়ে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতেও বলা হয়েছে। হাসপাতালের নার্সিং কর্ত্রীদের হস্টেলের উপরের বিভিন্ন তলা থেকে ছাত্রীদের একতলার ঘরে এনে রাখতে বলা হয়েছে। যদি তা হাস্যকর পরামর্শ বলেই মনে করছেন নার্সিং শাখার পদস্থ কর্ত্রীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্ত্রী বলেন, একতলায় এলেই কি আত্মহত্যা বা অস্বাভাবিক মৃত্যু বন্ধ হবে? আগে আমাদের দাবিমতো হস্টেলের পরিকাঠামো উন্নতি, প্রয়োজনীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ও নিরাপত্তার আয়োজন করুক হাসপাতাল। তারপর অন্য কথা। নার্সিং শাখার তরফে ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃতের বাবা সুকুমার রুইদাস পেশায় রংমিস্ত্রি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন সমাপ্তি। তিন ছেলে-মেয়ে ও স্বামী, স্ত্রী মিলিয়ে একার রোজগারে সংসার চালানো কষ্টের ছিল সুকুমারবাবুর। মৃত্যুর আগের রাতে প্রায় দশটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে বাবার সঙ্গে কথা বলেন সমাপ্তি। এ বছর বাঁকুড়ার কোতলপুর থানার তাজপুর রামচরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ৯১ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন তিনি। শান্ত স্বভাবের এই মেধাবী ছাত্রীকে নিয়ে গর্ব করতেন গ্রামের মানুষ ও স্কুলের শিক্ষকরা।