সোহম কর, কলকাতা: এই প্রথমবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে এমন কিছু ব্যক্তিত্বকে সম্মান জ্ঞাপন করা হল, যাঁরা মঞ্চ এবং বড়পর্দার দিকপাল। নন্দন চত্বরের একতারা মঞ্চে এই সম্মান জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ডানা’। সঞ্চালনা করেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং সোহিনী সেনগুপ্ত। আট জনকে এই বিশেষ সম্মান জানানো করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী, মনোজ মিত্র, অরুণ মুখোপাধ্যায়, অশোক মুখোপাধ্যায়, এবং বাংলাদেশের নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। সৌমিত্রকে নিয়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উত্সাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। উত্সব কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, চিত্রা সেন, শাঁওলি মিত্র এবং মেঘনাদ ভট্টাচার্যকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা অসুস্থতার কারণে এদিন উপস্থিত না থাকতে পারলেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই অভিনব প্রয়াসের জন্য প্রত্যেকেই ফেস্টিভ্যালের চেয়ারপার্সন রাজ চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বললেন, ‘আসলে আমাদের সমাজ এবং সমাজের রক্ষকরা থিয়েটারের শক্তি যে কতটা, সেটা কোনওদিন বোঝেননি বা বুঝতে চাননি। আমি দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার সঙ্গে প্রায় চার দশক যুক্ত রয়েছি। আমার প্রায়ই ইচ্ছে করে, ওটার নাম বদলে ন্যাশনাল স্কুল অব টেলিভিশন করে দিতে। কারণ ওখান থেকে পাশ করা লোকেরা আর থিয়েটার করেন না। তাঁরা মুম্বইতে ফ্রিলান্সিং করে চলচ্চিত্র অথবা টেলিভিশনে কাজ করেন। এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আশা করব ভবিষ্যতে বাঙালির কাছে এবং বাংলার সরকারের কাছে থিয়েটার তার যথার্থ মর্যাদা পাবে।’
বাংলা ছবির বর্তমান অবস্থা নিয়ে এদিন একটি সেমিনারেরও আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে অংশ নেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অতনু ঘোষ এবং দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। এই বছরের চলচ্চিত্র উত্সবের কিছু কিছু প্রেক্ষাগৃহে প্রায়ই ছবির প্রদর্শন পরিবর্তন হওয়ার কারণে মুশকিলে পড়তে হয়েছে দর্শকদের। এই বিষয়ে রাজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, কারিগরি সমস্যার কারণে কিছু কিছু প্রেক্ষাগৃহে এই সমস্যা হয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। অনেক ক্ষেত্রে ছবির ফরম্যাট ঠিক ছিল না বলে ছবি দেখানো যাচ্ছে না। তবে আমরা পুরো বিষয়টাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটিয়ে নিচ্ছি।
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে সিরিয়ার ছবি ‘দ্য এন্ড উইল বি স্পেকটেটর’ দেখার উত্সাহ ছিল। ছবির পরিচালক এরসিন সেলিক তাঁর কলাকুশলীদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। সিরিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। পরিচালক সুদেষ্ণা রায় এবং অভিজিত্ গুহ তাঁদের ছবি ‘শ্রাবণের ধারা’র জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং গার্গী রায়চৌধুরী। এছাড়াও তামিল ছবি ‘মাদাথি’র পরিচালক লীনা মানিমেকালাই ছবির কুলাকুশলীদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। তার সঙ্গে সোমবারই শুরু হয়েছে ‘পাড়ায় পাড়ায় সিনেমা’। কলকাতা এবং বিধাননগরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করেছে উত্সব কর্তৃপক্ষ।