কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
বৈঠক শেষে বের হওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসে, বাইরে কয়েক হাজার মানুষের ভিড়। কাদায় ভরা রাস্তা উপেক্ষা করেই তাঁদের কাছে পৌঁছে যান মমতা। সেখানেই জানতে পারেন, ভিড়ের মধ্যে রয়েছেন মৃত সঞ্জয় দাসের স্ত্রী ববিতা ও তাঁর শিশুসন্তান। তাঁদের কাছে ডেকে নিয়ে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে আদর করেন। এরপর রাজ্য সরকারের তরফে সেই চেক নিজেই তুলে দেন ববিতার হাতে। সান্ত্বনা দেওয়ার সঙ্গে বলেন, একটু পরে জেলাশাসকের সঙ্গে গিয়ে দেখা করো। তোমার জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করতে বলে দিয়েছি তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন ববিতা। পরম স্নেহে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এরপর হ্যান্ড মাইক নিয়ে সমবেত জনতাকে তাঁর সম্বোধন— বাড়িঘর যা নষ্ট হয়েছে, তা বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঠিক করা হবে। চাষের ক্ষতির বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। কৃষি দপ্তরের একটি টিমও এলাকায় আসছে। সাইক্লোনের দাপটে মাঠেই নুইয়ে পড়া পাকা ধানের গাছগুলো নিয়ে কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে।
এদিন বৈঠকে বুলবুলের তাণ্ডবে এখনও পর্যন্ত মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানোর সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ম্যাডাম, এদিনই নদীর চরায় একটি মৃতদেহ মিলেছে। তবে ওই মৃতদেহটি নিখোঁজ থাকা আট মৎস্যজীবীর মধ্যে কারও কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৈঠকের পরেই জানা যায়, একটি নয়, নামখানার কাছে নদীর চরায় মিলেছে দুটি মৃতদেহ। সেগুলি নামখানায় ডুবে যাওয়া ট্রলারের মৎস্যজীবীদের বলেও শনাক্ত করা হয়। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক আধিকারিকদের বলেন, বহু জায়গায় বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে। মেরামতির আগে সেগুলির সংযোগ যেন বিচ্ছিন্ন করা হয়। দেখবেন কোনও মানুষের যেন বিপদ না হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় এলাকায় প্রচার করে মানুষকে সতর্ক করুন। দুর্গত এলাকায় সাপে কাটার ওষুধ অ্যান্টি ভেনাম সিরাম মজুত থাকার বিষয়টি শুনে আশ্বস্ত হন মুখ্যমন্ত্রী। এরই পাশাপাশি খোঁজ নেন সরকারি ত্রাণ, জামা কাপড়, ত্রিপল সহ অন্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের বিষয়ে। কোনটি বেশি দরকার তা জেনে নিজেই নোট করে নেন। বলেন, বেবি ফুড আর শুকনো খাবারও দিন ত্রাণে। আধিকারিকদের তাঁর পরামর্শ, দেখবেন, খাবার আর ওষুধপত্র যাতে মেয়াদ উত্তীর্ণ না হয়। টাকা দিয়ে কেনা হয় এসব। কেউ যেন এসময় চালু ওষুধের সঙ্গে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ মিশিয়ে দিতে না পারে। এতে সরকারের বদনাম হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগের আগে ১ লক্ষ ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছিল। এখন ৪৭১টি ত্রাণ শিবির চলছে। রয়েছে ৩২৩টি রান্না ঘর। মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেন, ম্যাডাম, টেলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তা মেরামত হয়েছে, এখন প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও খবর আসছে। দুর্গত মানুষের সংখ্যা বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ। সেটা ১০ লক্ষ ছাড়াবে। দুর্যোগের আগে গঙ্গাসাগর ভ্রমণে এসে গত দু’দিন ধরে সেখানেই আটকে পড়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ৫৫ জন পুণ্যার্থী-পর্যটক। খাবার এবং পানীয় জলের অপ্রতুলতায় সঙ্কটে পড়েছিলেন তাঁরা। নবান্নের শীর্ষস্তরের নজরে এসেছিল বিষয়টি। তারপরই জেলাশাসক পি উলগানাথন উদ্যোগ নিয়ে পুণ্যার্থী-পর্যটকদের খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করেন। এদিন তাঁরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন শুনে দৃশ্যত সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাহ, বেশ ভালো কাজ হয়েছে।